ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিশাদ-তানজিদের নৈপুণ্যে শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারাল টাইগাররা

সিরিজ বাংলাদেশের

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১৮ মার্চ ২০২৪

সিরিজ বাংলাদেশের

ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা হাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা

প্রায় এগার বছর পর ঘরের মাঠে সকালে শুরু ওয়ানডে। ফ্লাড লাইটের আলোয় ডিউ ফ্যাক্টরের কারণে প্রথম দুই ম্যাচে ভাইটাল হয়ে উঠেছিল টস। সোমবার চট্টগ্রামে সিরিজ ফয়সালার ম্যাচে দিনের আলোয় সমান সুবিধার কথা ভেবে টস জিতে ব্যাটিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক কুসল মেন্ডিস। ফিল্ডিংয়ে একাধিক ক্রিকেটারের ইনজুরি সত্ত্বেও দারুণ বোলিংয়ে তাদের ২৩৫ রানে গুটিয়ে দেয় টাইগাররা। এরপর সৌম্য সরকারের ‘কনকাশন’ বদলি হিসেবে নামা ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের চমৎকার ব্যাটিং। তাওহিদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিমের ভালো সঙ্গ।

মনে হচ্ছিল সহজ জয় পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৩০ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সেই চাপ উড়িয়ে প্রায় ১০ ওভার আগেই ৪ উইকেটের (২৩৭/৬) স্মরণীয় এক জয় উপহার দিয়ে নায়ক বনে গেলেন রিশাদ হোসেন। ২-১এ সিরিজ পকেটে পুড়ল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ১৭৮ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। ২৩৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে তখনো প্রয়োজন ৫৮ রান। এমন পরিস্থিতিতে আরেকটি উইকেট পড়লে চাপ আরও বাড়ত।

সে সময় উইকেটে থাকা মুশফিকুর রহিমকে (৩৬ বলে অপরাজিত ৩৭) সঙ্গ দিতে নামেন রিশাদ হোসেন। কিন্তু সঙ্গ দেওয়ার বদলে রিশাদ নিজেই হয়ে ওঠেন ম্যাচ জেতানোর নায়ক! ব্যাট হাতে প্রথম বলেই স্লগ সুইপে ছক্কা মেরে শুরু করেন। পরের বলে এলবিডব্লিউ চেয়ে রিভিউ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে আম্পায়ার্স কলের কারণে রিশাদ বেঁচে যান সে যাত্রায়। এরপর অবশ্য আর ফিরে তাকাননি ২১ বছর বয়সী এ লেগস্পিনিং-অলরাউন্ডার। ১৮ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় খেলেছেন ৪৮ রানের চোখ ধাঁধানো অপরাজিত ইনিংস। ‘ম্যাচটা জিততে পারায় আমি খুবই আনন্দিত।

প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম, পরে আমি ব্যাটে-বলে ভালোভাবেই সংযোগ করতে পেরেছি।’ ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসে বলেন রিশাদ। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রিশাদের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটিং বিপদ ডেকে আনতে পারত। সে সময় তাঁর সঙ্গে উইকেটে ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিক। মুশি তাঁকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে রিশাদ বলেন, ‘মুশফিক ভাই বলেছেন, তোমার জোনে (জায়গায়) বল পেলে মেরে দাও।’ অভিজ্ঞ সতীর্থের কাছ থেকে সাহস পেয়ে রিশাদও আর পেছনে ফিরে তাকাননি। বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে তবেই থেমেছেন।
সিলেটে অঘোষিত ফাইনাল হয়ে ওঠা শেষ টি২০তে হেরে সিরিজ খুইয়েছিল বাংলাদেশ। তবে চট্টগ্রামে সুযোগ হাতছাড়া করেনি টাইগারা। ২০২১ সালের পর, সর্বোপরি ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়। ১ সেঞ্চুরিতে ৮১.৫ গড়ে ১৬৩ রান; পূর্ণাঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার প্রথম সিরিজেই সিরিজসেরা নাজমুল হোসেন শান্ত।

ফয়সার ম্যাচে মূলত ব্যাট হাতে কার্যকরী ইনিংস খেলা তানজিদ হাসান তামিম এবং রিশাদ হোসেনের ঝড়ের কাছেই হেরেছে শ্রীলঙ্কা। অথচ তানজিদ তামিম এই ম্যাচের একাদশেও ছিলেন না। ইনজুরিতে পড়া সৌম্য সরকারের কনকাশন বদলি হিসেবে ব্যাট করতে নেমে তামিম দারুণ খেলেছেন। ব্যাট হাতে আউট হওয়ার আগে ১১৭ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় খেলেছেন ৮৪ রানের কার্যকার এক ইনিংস। এরপর রিশাদের ওই শেষেরÑঝড়। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘তানজিদ শুরুতে সত্যি ভালো ব্যাটিং করেছে।

এরপর মুশফিক ভাই যেভাবে ব্যাটিং করেছে, আমার মনে হয় এটা রিশাদের ইনিংসকে ভালো করতে সাহায্য করেছে। তার আগে এ ধরনের উইকেটেও (ব্যাটিং সহায়ক) বোলাররা নিজেদের প্রমাণ করে দেখিয়েছে। পেসাররা ভালো বোলিং করেছে এবং মাঝের ওভারে ভালো করেছে মেহেদী মিরাজ।’
ম্যাচটিতে বাংলাদেশী ব্যাটাররা শেষদিকে ঝড় তুললেও, জয়ের পথটা সহজ হয়ে ওঠে বোলারদের কল্যাণে। বিশেষ করে পেসাররা নতুন বলে দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে বড় জুটি গড়তে দেননি লঙ্কানদের। ৪২ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন আগের ম্যাচেই ক্যারিয়ারের ১শ’ উইকেট নেওয়া তাসকিন। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পাশাপাশি ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ ও মিরাজ। অন্যদিকে লঙ্কানদের হয়ে এদিন ব্যতিক্রম ছিলেন জানিথ লিয়ানাগে। তিনি এক প্রান্ত আগলে রেখে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে আগের ৫ ইনিংসে একবার ৯৫ রানে থমকে যান তিনি, ফিফটি করেন আরও দুটিতে। এবার স্বাদ পেলেন প্রথম সেঞ্চুরির। ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০২ বলে ১০১ রান করে অপরাজিত থাকেন ২৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার।

×