ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আর্জেন্টিনার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াই

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ২৫ নভেম্বর ২০২২

আর্জেন্টিনার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াই

মেক্সিকোর বিরুদ্ধে জয়ের প্রত্যাশায় মাঠে নামতে প্রস্তুত আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি

যা কল্পনাতেই ছিল না সেটাই হয়েছে। হট ফেভারিট হয়ে খেলতে নেমে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই অপ্রত্যাশিতভাবে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে আর্জেন্টিনা। এই এক হারেই এখন খাদের কিনারায় চলে গেছে আলবিসেলেস্তারা। ৩৬ বছর পর শিরোপাস্বপ্ন নিয়ে কাতারে আসা দলটিকে এই মুহূর্তে ভাবতে হচ্ছে গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পার হওয়া নিয়ে। এ লক্ষ্যে আজ রাতে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে লিওনেল মেসির দলকে। দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে প্রথম জয়ের খোঁজে মেক্সিকো পরীক্ষায় অবতীর্ণ হচ্ছে আর্জেন্টিনা। ‘সি’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায়।
বর্তমানে এই গ্রুপে একটি করে ম্যাচ শেষে পূর্ণ ৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে চমক দেখানো এশিয়ার গর্বের প্রতীক সৌদি আরব। ১ পয়েন্ট করে নিয়ে পরের দুই অবস্থানে আছে পোল্যান্ড ও মেক্সিকো। এই দল দুটি নিজেদের প্রথম ম্যাচে একে অপরের মোকাবিলায় গোলশূন্য ড্র করে। আর্জেন্টিনা-মেক্সিকো ছাড়াও ‘সি’ গ্রুপে আজ আরেক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে সৌদি আরব ও পোল্যান্ড। দুটি ম্যাচই প্রতিদ্বন্দ্বী চার দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার জন্য ম্যাচটি অনেকটা বাঁচামরার। এই ম্যাচে মেক্সিকানদের হারাতে পারলে নকআউট রাউন্ড অর্থাৎ শেষ ষোলোতে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করবে মেসির দল। কিন্তু হেরে গেলে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই বাদ পড়াটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। ম্যাচ ড্র হলেও খাদের কিনারায় থাকবে স্কালোনি বাহিনী। তখন শেষ দুই গ্রুপ ম্যাচের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশকে।
সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনার সামনে এখন কঠিন সমীকরণ আর চ্যালেঞ্জ। তবে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ দুই ম্যাচ জিততে পারলে আর কোনো হিসাবের প্রয়োজন পড়বে না। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হলে আর্জেন্টিনাকে এখন এই পথেই হাঁটতে হবে। এটা ভালো করেই জানেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও কোচ লিওনেল স্কালোনি। দুজনই তাই জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না। মেক্সিকো ম্যাচের আগে মেসি বলেন, আমাদের লক্ষ্য পরিষ্কার। প্রথম ম্যাচে আমরা প্রত্যাশা মেটাতে পারিনি। তবে সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের সামথ্য আছে ভালো করার। সবাই সেটাই দেখাতে উন্মুখ হয়ে আছে। আশা করছি মেক্সিকোর বিরুদ্ধে আমরা স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারব। কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেন, এক হারে সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। সবকিছু আমাদের হাতেই আছে। এক্ষেত্রে মাঠের পারফরমেন্স জরুরি। আশা করছি মেক্সিকো ম্যাচে ছেলেরা ঘুরে দাঁড়াবে। আসলে আমাদের জয়ের বিকল্প নেই; আর সেটা ছাড়া কিছু ভাবছে না কেউ।
সৌদি আরবের বিরুদ্ধে খেলার আগে টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনা দলকে গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে সেরাটা দিতে হবে। নিজের শেষ বিশ্বকাপটা রাঙানোর লক্ষ্য পূরণ করতে হলে মেসিকেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এমন অবস্থায় আর্জেন্টিনা অনুপ্রেরণা হিসেবে নিচ্ছে ১৯৯০ বিশ্বকাপ আর তাদের ইতিহাসের সেরা তারকা দিয়াগো ম্যারাডোনাকে। মেসিদের এখন সেই প্রেরণা খুঁজতে ফিরে তাকাতে হচ্ছে ৩২ বছর পেছনে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরে গিয়েছিল ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। পরের দুটি ম্যাচে একটিতে জয় ও অন্যটিতে ড্র করে গ্রুপের সেরা তৃতীয় হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নিয়েছিল তারা। তখন অবশ্য বিশ্বকাপের অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ছিল ২৪। ছয় গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপের সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ডে স্থান পেত তৃতীয় স্থান অর্জনকারী চারটি দল। আর্জেন্টিনা ছিল তাদেরই একটি।

এর পরের গল্প তো ইতিহাসেই লেখা। দ্বিতীয় রাউন্ডে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারানোর পর কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে গোলরক্ষক সার্জিও গয়কোচিয়ার বীরত্বে যথাক্রমে যুগোসøাভিয়া ও ইতালিতকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। যদিও ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে কাঁদতে হয়েছিল ম্যারাডোনাসহ কোটি কোটি আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। এবার অবশ্য ৩২ দলের বিশ্বকাপ। যে কারণে গ্রুপ থেকে দুটি দল বাদ পড়বে আর দুটি দল শেষ ষোলোর টিকিট পাবে। দুই বছর আগে ম্যারাডোনা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আর্জেন্টইন ফুটবল ঈশ্বরের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর পরের দিন কঠিন পরীক্ষায় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এমন অবস্থায় ম্যারাডোনা বেঁচে থাকলে নিশ্চিত করেই মেসিদের অনুপ্রেরণা জোগাতেন। তবে মেসির বিশ্বাস, ম্যারাডোনা তাদের সঙ্গেই আছেন। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলেন, ‘গ্যালারিতে ম্যারাডোনাকে না দেখাটা অদ্ভুত অনুভূতি। তাকে দেখে দর্শকদের উন্মাদনাও দেখা যাবে না।

আসলে ম্যারাডোনার না থাকায় অনেকটাই অন্যরকম। তবে আর্জেন্টিনাকে তিনি ভালোবাসতেন। সব সময়ই দলের পাশে থেকেছেন। যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি দলের সঙ্গেই থাকবেন।’ বিশ্বকাপ এলেই চীনের প্রাচীর হয়ে গোলের সামনে দাঁড়িয়ে যান গিয়েরমো ওচোয়া। যার ছাপ দেখা গেছে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে। এবার আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে কঠিন পরীক্ষার জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করেছেন মেক্সিকোর অভিজ্ঞ এই গোলরক্ষক। পোলিশদের বিরুদ্ধে রবার্ট লেভানডোস্কির পেনাল্টি শট রুখে দেয়া ওচোয়া বলেন, আমরা লড়াই করতে প্রস্তুত। মেসিদের সহজে ছেড়ে দেব না।

 

সম্পর্কিত বিষয়:

×