ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধীরগতির উইকেটেও দুয়েকটা ম্যাচজয়ী স্পেল করতে চান এই কৃতী পেসার, প্রত্যাশা ওয়ার্নার-স্মিথের উইকেট শিকার

আত্মবিশ্বাসটাই বড় পুঁজি মনে করছেন তাসকিন

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২২ আগস্ট ২০১৭

আত্মবিশ্বাসটাই বড় পুঁজি মনে করছেন তাসকিন

মোঃ মামুন রশীদ ॥ একটা সময় শুধু ওয়ানডে ও টি২০ ম্যাচ খেলতেন। ওয়ানডে ও টি২০ অভিষেকের তিন বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে নিজের টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে। সবমিলিয়ে ৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বুঝেছেন টেস্ট ক্রিকেট অনেক কঠিন। কারণ ধারাবাহিকতা ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। এবারই প্রথম ঘরের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগ হয়ে যেতে পারে ২২ বছর বয়সী এ তারকা পেসারের। বিষয়টি নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত তিনি। তবে দেশের স্পিনবান্ধব ধীরগতির উইকেটে দুয়েকটা স্পেলে দুর্দান্ত কিছু করে দলের জন্য কার্যকর অবদান রাখতে চান তিনি। সেক্ষেত্রে তার স্বপ্ন অস্ট্রেলিয়ার মারকুটে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের উইকেট শিকার করা। সেজন্য বিশেষ করে রিভার্স সুইং নিয়ে বেশি বেশি কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তাসকিন। সোমবার মিরপুর জাতীয় একাডেমি মাঠে অনুশীলনের পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে যেকোন ক্রিকেটারের ফিটনেসটাই অনেক বড় বিষয়। কারণ, ৫ দিন ধরে টানা মাঠে থাকতে হয়। সেজন্য ক্রিকেটারদের অনেক বড় ধৈর্য পরীক্ষা দিতে হয়। ওয়েলিংটনে এ বছর জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর তাসকিন ভালভাবেই উপলব্ধি করেছেন এ ফরমেটের ক্রিকেট অত্যন্ত কঠিন। তিনি বলেন, ‘এখন আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশে অনেক ভাল পারফর্মার আছে। কিন্তু টেস্টের স্কোয়াডে থাকার বিষয়টা শান্তি পাওয়ার মতো। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট দলে থাকতে পেরে আনন্দিত এবং ভাগ্যবান মনে করছি নিজেকে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার ফিটনসে আগের চেয়ে অনেক ভাল। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে দুই বছরে বড় কোন ইনজুরি হয়নি। টেস্ট সেশন সেশন ভাগ তো, ওয়ানডে বা টি২০-তে দেখা যায় একটা বা দুইটা স্পেলেই ম্যাচ শেষ। কিন্তু সাত আটটা স্পেল থাকে টেস্টে। জিনিসটা এত সহজ নয়। নিউজিল্যান্ডে বোলিং করে যে আনন্দ পেয়েছি, তা শ্রীলঙ্কায় পাইনি। আর বাংলাদেশে আমি এখনও টেস্ট খেলিনি। আমার মনে হয় অনেক ধৈর্য ও দক্ষতার ব্যাপার। সত্যি কথা বলতে কি, আমি বেশি টেস্ট খেলিনি। চারটা ম্যাচ খেলে আমার মনে হয়েছে এই ফরমেট অনেক কঠিন। তবে আশা করছি সামনে ভাল কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।’ অস্ট্রেলিয়ার দলটি যেমন পেসার নির্ভর, তেমনি বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর। আর বাংলাদেশের মাটিতে সবসময়ই স্পিনারদের ওপরই নির্ভর করতে হয় ধীরগতির উইকেট হওয়ার কারণে। অসি পেসাররাও এগিয়ে আছে অনেকাংশে বাংলাদেশের পেসারদের চেয়ে। এ বিষয়ে তাসকিন বলেন, ‘ওদের পেসাররা অবশ্যই ভাল। তবে আমরাও ফেলে দেয়ার মতো না। আমাদের পেসাররা অনেক বড় ম্যাচ জিতিয়েছে। আমরা এই সিরিজেও ভাল কিছু করতে পারি। সে রকম বিশ্বাস আমাদের আছে। ওদের তুলনায় আমরা পিছিয়ে। অনুশীলন করতে করতে আমরা আগের চেয়ে ভাল।’ বাংলাদেশের অন্যতম পেস স্তম্ভ মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি দীর্ঘ ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর অবশ্য তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এবার স্পিনবান্ধব উইকেটে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বেন তিনিসহ দলের সব পেসারই। এ বিষয়ে তাসকিন বলেন, ‘রিভার্স সুইং বলেন বা সুইং বলেন, সবকিছু নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি আগে যা করতে পারিনি এখন আমরা তা পারব। মুস্তাফিজের কাছে সব সময় আমাদের আশা বেশি থাকে। আল্লাহর রহমতে সে আশা পূরণও করে। হয়তো শেষ কয়েকটা ম্যাচ ভাল হয়নি। এটা কিন্তু বিশ্বের সেরা বোলারদেরও দুই একটা ম্যাচ খারাপ হয়। এটা নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। আশা করি ও প্রত্যাবর্তন করবে। আমাদেরও অনেক দায়িত্ব আছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভাল কিছু করার। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। ওদের চেয়ে আমরা উইকেট ভাল বুঝি।’ অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দল সবসময়ই বেশ চ্যালেঞ্জিং। তাদের ব্যাটসম্যানরাও ফর্মে আছে এবং পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে ভাল খেলেন তারা। এ বিষয়ে তাসকিন তার ইচ্ছা ও স্বপ্নে কথা জানালেন, ‘টেস্টে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে হয়। চেঞ্জ অব পেস দরকার আছে। আশা করি পরিস্থিতি অনুসারে আমরা খেলতে পারব। আমি সুযোগ পেলে একটা ম্যাচ উইনিং স্পেল করতে চাই। ম্যাচজয়ী স্পেল মানে পাঁচ-সাত উইকেট নেয়া নয়। বরং ভাল কিছু ওভার করা। দেখা গেল স্পিনাররা পাঁচ-সাতটা উইকেট নিয়েছে। এর মাঝখানে দুইটা উইকেট নিয়ে নিলাম। যা দলকে উপকার করে দেবে। এমন কিছুই করতে চাই। পুরনো বলে রিভার্স সুইংটা করতে চাই। এসব নিয়ে কাজ করছি আশা করি ভবিষ্যতে অনেক কাজে দেবে। আমি মনে করি না প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলায় ওদের কোন অসুবিধা হবে। তারা বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটা তাদের সমস্যা হবে না। তাদের টপঅর্ডারে যারা আছে, সবাই খুব ভাল ফর্মে আছে। অভিজ্ঞরা তো আছেই। নতুনরাও ধারাবাহিকভাবে ভাল করছে। আমার স্বপ্নের উইকেট ওয়ার্নার-স্মিথ।’ টেস্ট দলে অনেক বিতর্কের পর ফিরেছেন স্পেশালিস্ট টেস্ট ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। বিষয়টি বেশ আনন্দায়ক বলে দাবি করলেও তাসকিন জানালেন চোখের অসুস্থতার কারণে মোসাদ্দেকের না থাকাটাও দুঃখজনক। কিন্তু যেটাই ঘটুক নিজেদের নিয়ে এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দল। তাসকিন বলেন, ‘দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট, এটা আনন্দের ব্যাপার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে ম্যাচটা জিতেছি, তা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আত্মবিশ্বাসটা সেখান থেকে বেড়েছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের হারিয়েছি। এ কারণেই বিশ্বাসটা বেশি। চার পাঁচ বছর আগে, যখন টিভিতে খেলা দেখতাম, তখনকার চেয়ে বিশ্বাসটা এখন অনেক বেশি। লড়াই করার এবং জেতার।’
×