ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আড়ালে থাকা লুনিনই রিয়ালের নায়ক

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আড়ালে থাকা লুনিনই রিয়ালের নায়ক

জয় উদ্যাপন করছেন রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলাররা

রিয়াল মাদ্রিদে বরাবরই তারকা গোলরক্ষকের ছড়াছড়ি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধান ম্যাচগুলোতে দলটির গোলবার সামলেছেন বেলজিয়ামের থিবো কোর্তোয়া। কিন্তু এবার তার ইনজুরির কারণে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে রিয়ালের। যে কারণে বাধ্য হয়ে রিয়াল তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দের গোলরক্ষকদের খেলাতে থাকে। যে কারণে সুযোগ পান তৃতীয় পছন্দের আন্দ্রি লুনিনও। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের ২৫ বছর বয়সী এই তরুণই এখন রিয়াল মাদ্রিদের আলোচিত তারকা। 
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের সেমিফাইনালে ওঠার মূল কারিগর এতদিন আড়ালে থাকা লুনিন। এই ম্যাচের ম্যান অব দা ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছেন রিয়ালের উরুগুয়েন মিডফিল্ডার ফেডে ভালভের্ডে। ম্যাচজুড়ে মাঠময় ছুটে বেরিয়েছেন তিনি বরাবরের মতোই। তবে ম্যাচ সেরার ট্রফিটি অনায়াসে উঠতে পারত লুনিনের হাতেও। ১২০ মিনিট ধরে রিয়াল মাদ্রিদের দেয়াল হয়ে ছিলেন তিনি গোলবারের নিচে। 
পরে টাইব্রেকারের রোমাঞ্চেও তিনিই দলের জয়ের ত্রাতা। মৌসুমজুড়েই অসাধারণ পারফর্ম করে চলেছেন তিনি। তবে সিটির বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে তিনি যেন মেলে ধরেন ক্যারিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স। এই মৌসুমে অবশ্য বারবারই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন লুনিন। তার ক্যারিয়ারের মোড় বদলের মৌসুম বলা যায় এটিকে। মূলত রিয়ালের রিজার্ভ গোলকিপার ছিলেন লুনিন।

২০১৮ সালে রিয়ালে আসার পর ধারে বিভিন্ন ক্লাবে খেলানো হয় তাকে তিন মৌসুম। পরে মূল স্কোয়াডে রাখা হলেও বিকল্প গোলরক্ষক হয়েই ছিলেন। এই মৌসুমের আগেও দলের খুব একটা ভরসা আদায় করে নিতে পারেননি তিনি। গুরুতর চোটে কোর্তোয়া লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর উদ্বিগ্ন রিয়াল তাই ধারে এই মৌসুমের জন্য নিয়ে আসে গোলরক্ষক কেপা আরিসাবালাগাকে। লুনিনকে তখন তৃতীয় পছন্দের গোলরক্ষক বললেও ভুল হয় না। তবে এটিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নন লুনিন।

তাকে ও কেপাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাচ্ছিলেন কোচ কার্লো আনচেলোত্তি। সেই সুযোগটাই দুহাত ভরে গ্রহণ করে এমনভাবে নিজেকে মেলে ধরেন যে, দলের প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হয়ে ওঠেন। কোর্তোয়ার মতো অসাধারণ একজনের অভাব তিনি বুঝতেই দিচ্ছেন না চলতি মৌসুমে। ম্যানচেস্টার সিটির বিরুদ্ধে এমন পারফরম্যান্স করেছেন যেটি করতে পারলে গর্বিত হতেন স্বয়ং কোর্তোয়াও।
এত বড় ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথমবার ১২০ মিনিট ধরে খেলা। এরপর টাইব্রেকারের পরীক্ষা। সবকিছু মিলিয়ে এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি লুনিনের। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ দুর্দান্তভাবে জয় করে লুনিন বার্তাটা দিয়ে রেখেছেন। তিনি খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন না কোর্তোয়া ফেরার পরও। ম্যাচ শেষে লুনিন বলেন, আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। ক্লান্তিতে প্রায় শেষ হয়ে গেছি আমি। ক্যারিয়ারের প্রথমবার এরকম ম্যাচ খেললাম। ১২০ মিনিট মাঠে থাকা, এরপর টাইব্রেকার।

এত এত চাপ আর এরকম দায়িত্ব সবকিছু ভালোভাবে করতে পারার অনুভূতি ব্যাখ্যা করার মতো নয়। সতীর্থদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। মাঠে যেভাবে সবকিছুর জন্য নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন তারা। আমার সতীর্থরা যেভাবে ১২০ মিনিট ধরে মাঠে ছুটে বেরিয়েছে, নিজেকে দিয়ে এমন কিছু চিন্তাও করতে পারি না আমি।
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলোত্তি বলেন, সবাই ভেবেছিল আমরা শেষ। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ কখনো মরে না।  ইতিহাদ থেকে বেঁচে ফেরার একটাই উপায় সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। আমরা সেটা করেছি এরপর রক্ষণভাগ ভালোভাবে সামলেছি। সিটির বিরুদ্ধে এটা ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। রিয়াল কোচ জানিয়েছেন, ম্যাচটা টাইব্রেকারে গড়ানোর পর বুঝে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে তারাই উঠবেন।

সিটির মতো প্রবল প্রতিপক্ষকে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত রুখতে রাখতে পারায় সম্ভবত এই আত্মবিশ্বাসটা জন্মেছিল। তবে সবকিছুর মূলে যে প্রেরণা সেটা সবার আগে স্মরণ করেছেন রিয়াল কোচ। বলেন, আমি অনেকবারই রিয়াল মাদ্রিদকে অসম্ভব জায়গা থেকে জয় করতে দেখেছি। এটার কারণ বোধ হয় রিয়ালের ব্যাজটা। এটা আপনার ভেতর থেকে এমন কিছু বের করে আনবে, যেটা আপনি নিজেই জানতেন না যে আপনার ছিল! টাইব্রেকারে বুঝে গিয়েছিলাম যে আমরাই যাচ্ছি সেমিফাইনালে। লুনিন দারুণ একটা ম্যাচ খেলেছে।
রিয়াল অধিনায়ক নাচো ফার্নান্দেজ বলেন, এসব জাদুকরী রাত। ছোটবেলায় যে রাতগুলোর স্বপ্ন দেখতাম। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সিটি কোচ পেপ গার্ডিওলা রিয়াল মাদ্রিদকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, যোগ্য দল হিসেবেই জয় পেয়েছে তারা।

×