ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাসার গবেষণায় আইবিএম কম্পিউটার মস্তিষ্ক

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

নাসার গবেষণায় আইবিএম কম্পিউটার মস্তিষ্ক

আইবিএম কোম্পানির প্রশ্নোত্তর ডিভাইস ওয়াটসন কম্পিউটার সিস্টেম এখন মহাকাশ গবেষণায় প্রবেশ করছে যাতে করে নাসাকে মহাকাশ ভ্রমণ বিজ্ঞানের সীমানা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়ে এবং মহাকাশ ভ্রমণকালে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে সাহায্য করা যায়। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে জিওপার্ডি ধাঁধা প্রতিযোগিতায় সাবেক বিজয়ীদের হারিয়ে দিয়ে ওয়াটসন খ্যাতি লাভ করেছি। নাসার ল্যাংলে রিসার্চ সেন্টারে আইবিএমের প্রথম কম্পিউটার ব্যবহৃত হওয়ার ৬০ বছরেরও বেশি সময় পর নাসা কর্তৃপক্ষ নতুন কাজে আবার আইবিএম কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছে। সে কাজটা হলো মহাকাশ গবেষণার মধ্য দিয়ে যে বিপুল পরিমাণ তথ্য বেরিয়ে আসছে সেগুলো বিশ্লেষণের কাজে গবেষকদের সাহায্য করা। আইবিএম কর্মকর্তা প্রকৌশলী ক্রিস কোডেল্লা বলেন, মহাকাশ গবেষণায় উদ্ভূত তথ্যাবলী একমাত্র মানুষের পক্ষেই মর্মোদ্ধার ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো তথ্য এত পাহাড় পরিমাণ যে কোন মানুষের পক্ষে সেগুলো পাঠ করে দেখা সম্ভব নয়। আর সেজন্যই এগিয়ে এসেছে ওয়াটসন ব্যবস্থা। ওয়াটসন কম্পিউটার সিস্টেম মহাকাশের ক্ষেত্রে কর্মরত লোকদের কাছে গবেষণা উন্নয়ন উপদেষ্টা হতে পারে। ওয়াটসন যে জিনিসটা নিয়ে কাজ করে আইবিএম সেটাকে বলে কগনিটিভ কম্পিউটিং। ওয়াটসনের দ্বারা তার কাছে পরিবেশিত বিপুল পরিমাণ উপাত্ত পরীক্ষার পর সেগুলোর মধ্যে যোগসূত্র টানে এবং উপাত্তের পরিম-লের মধ্য থেকে অতি প্রাসঙ্গিক উত্তর ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার নথিপত্রের মধ্যকার সংযোগগুলো বিশ্লেষণ করা, সম্ভাব্য রোগ বা সমস্যা নির্ণয় করা, প্রতিকারের ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোর মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো বিশ্লেষণ করা। সেই সঙ্গে জিওপার্ডি খেলা তো অবশ্যই। ওয়াটসন তাকে স্বাভাবিক ভাষায় জিজ্ঞাস করা প্রশ্নের জবাব দিতে পারে। প্রশ্নকর্তা তাকে আরও বিস্তারিতভাবে প্রশ্ন করলে সেটা আরও ভালভাবে জবাব দিতে পারে। ল্যাংলের ল্যাব মানব গবেষকদের পক্ষে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত পাঠ করা, বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা এবং প্রয়োজনীয় উত্তর বের করতে পারা সম্ভব নয়। কারণ স্বভাবতই তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু ওয়াটসনের সেই সীমাবদ্ধতা নেই। আর সে কারণেই এখানে ওয়াটসনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে এমন একটা কম্পিউটার সিস্টেম এখানে লাগবে যা সব পড়তে পারবে এবং সবকিছুর মর্মোদার করতে পারবে। ওয়াটসন পড়তে পারবে এমন নথিপত্রের সংখ্যা নীতিগতভাবে সীমাহীন। ১৯৬০ এর দশকের প্রথমভাগে নাসার উদ্যোগে মানুষের প্রথম মহাকাশ অভিযান শুরু হলে ল্যাংলের ল্যাব আইবিএমের একটি বিশাল মেইনফ্রেমের কম্পিউটার নিয়ে আসে এবং সেটিকে জটিল ফ্লাইট ট্রাজেক্টরির হিসাব কষার কাজে ব্যবহার করা হয়। ওয়াটসন গবেষকরা এমন এক প্রোগ্রাম তৈরির বিষয়ে নাসার সঙ্গে একত্রে কাজ করছে যার মাধ্যমে উড্ডয়নরত অবস্থায় পাইলটদের যখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন অথচ তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সংগ্রহ করার মতো সময় তাদের নেই তখন তারা গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য পেতে পারে। প্রকল্পের পরবর্তী পর্যায় ২০১৭ সালে শুরু হবে। আইবিএমের আগের দিকের কম্পিউটারগুলো থাকত ল্যাংলের কম্পাউন্ডের বড় বড় রুমে। কিন্তু ওয়াটসন কাজ করে সার্ভারে যা দূর থেকে ব্যবহারকারীর সঙ্গে ক্লাউডের মাধ্যমে যোগাযোগ ঘটায়। অবশ্য একটা পরিবেশ-পরিস্থিতি আছে যেখানে এই কাজটা করা সবিশেষ অসুবিধাজনক হবে। যেমন মহাশূন্যে বা অন্য কোন গ্রহে যেখানে সময়ের ভিন্নতা ও সীমিত ব্যান্ডইউথের কারণে যোগাযোগের প্রবাহ আসা মন্থর হয়ে যায়। নাসার সঙ্গে আরেকটি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে যেখানে ওয়াটসন সিস্টেম মহামাশ যাত্রায় থাকার সময় নভোচারীদের রোগব্যাধি নির্ণয় করতে এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করতে পারবে। হয়ত ওয়াটসন সিস্টেমের সাহায্যে নভোযান চালানও যেতে পারে। আইবিএম মঙ্গলগ্রহের বুকে ওয়াটসনকে দিয়ে রোভার চালানোর সম্ভাবনা নিয়ে নাসার সঙ্গে আলোচনা করেছে। কম্পিউটারের উপাদানগুলো ক্রমশ আকার আয়তনে ছোট হয়ে আসার একদিন আইবিএমের স্থান হতে পারে মহাকাশে। তখন অনেক গুরুত্বপূূর্ণ কাজ এই ওয়াটসন কম্পিউটারকে দিয়ে করা যাবে যা এখন হয়ত কল্পনাও করা যায় না। সূত্র : লাইভ সায়েন্স।
×