ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ধোনির ব্যাটে স্বস্তির জয়, ৪ উইকেটে পরাজিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ মার্চ ২০১৫

কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তখন রান দরকার ৪৪। ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ক্যাচ আউট হলেন। কিন্তু সেটি ছিল ‘ফ্রি হিট’। সেই যে বাঁচলেন ধোনি, ম্যাচই শেষপর্যন্ত জিতিয়ে দিলেন। অপরাজিত ৪৫ রান করলেন ধোনি নিজে, ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও ৪ উইকেটে হারিয়ে দিলেন। এই জয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে সবার আগে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা নিশ্চিত করে নিল ভারত। ৪ ম্যাচে ৪টিতেই জয় পেয়ে অপরাজিতও রইল। পার্থে খেলা। বিশ্বের গতি উইকেটগুলোর মধ্য অন্যতম। এই উইকেটে ব্যাটসম্যানরা যে পেসারদের গতি সামলাতে হিমশিম খাবেন, তা স্বাভাবিক। খেলেনও। কিন্তু দিন শেষে জয়টি পেল ধোনির দলই। টস জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্তও নিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তমতো ব্যাটিংটা দুর্দান্ত হলো না। ৪৪.২ ওভারে ১৮২ রান করতেই গুটিয়ে গেল ক্যারিবীয়দের ইনিংস। মোহাম্মদ সামির (৩/৩৫) গতির সামনে কুলিয়ে উঠতে পারলেন না ক্রিস গেইল, ডোয়াইন স্মিথ, মারলন স্যামুয়েলসরা। জেসন হোল্ডার (৫৭) শেষ মুহূর্তে হাল না ধরলে আরও আগেই গুটিয়ে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের অবস্থাও যে খুব ভাল হয়েছে, তা নয়। ভারত ব্যাটসম্যানদেরও ঘাম ঝরাতে হয়েছে। ধোনি হাল না ধরলে ভারতের অবস্থাও করুণই হতো। শেষ পর্যন্ত ৩৯.১ ওভারে ৬ উইকেটে ১৮৫ রান করে জয় তুলে নেয় ভারত। এই হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথে বাধা পড়ে গেল। ৫ ম্যাচে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট ৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ম্যাচ আছে আর মাত্র ১টি। প্রতিপক্ষ দুর্বল সংযুক্ত আরব আমিরাত। ম্যাচটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতবে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায়। কিন্তু সেই জয়েও যে ক্যারিবীয়রা কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে ফেলবে, তাও নিশ্চিত নয়। একটি পথই এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাতে পারে, যদি আয়ারল্যান্ড পরপর তিন ম্যাচেই হেরে যায়। আজ জিম্বাবুইয়ের পর ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষেও হারতে হবে আয়ারল্যান্ডকে। এর বিপরীত ঘটলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে অনেক সমীকরণের মধ্যে পড়তে হবে। এত হিসেবের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পড়তে হতো না। যদি ভারতের বিপক্ষে জিতে যেত। কিন্তু জিতবে কিভাবে? এত কম রান করে কি আর জেতা যায়। তা যতই গতির উইকেট থাকুক, হারানোর জন্য ভারতের মতো ব্যাটিংনির্ভর দলের বিপক্ষে এত কম রান খুব বেমানানই। ম্যাচের আগে কী কথা। ভারত ক্রিকেটারদের উৎসব থামিয়ে দেবে। আরও কত কী! অথচ কী দেখা গেল, ভারতের সামনে পাত্তাই পেল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়া গেল। কিন্তু তাতে কী আর ম্যাচ জেতা যায়। একটু সময় গেল আর টপাটপ একটি করে উইকেট পড়তে লাগল। দলীয় ৮ রানেই স্মিথ (৬), ১৫ রানেই স্যামুয়েলস (২), ৩৫ রানের মুহূর্তে ‘দানবীয় ব্যাটসম্যান’ খ্যাত গেইল (২১) ও রামদিন (০), ৬৭ রানে সিমন্স (৯), ৭১ রানে কার্টার (২১), ৮৫ রানে রাসেল (৮) আউট হতেই ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়। এরপর ড্যারেন সামি ও হোল্ডার মিলে অষ্টম উইকেটে ৩৯ রানের জুটি গড়ে একটু এগিয়ে দেন। ১২৪ রানে সামি (২৬) আউটের পর নবম উইকেটে হোল্ডার ও টেইলর মিলে যে ৫১ রানের জুটি গড়েন, সেখানেই যা এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৭৫ রানে টেইলর (১১) আউট হন। এরপর ১৮২ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের হাল ধরা ৬৪ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় করা ৫৭ রানের মালিক হোল্ডারও আউট হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস গুটিয়ে যায়। ৩ উইকেট নেয়ার সামির সঙ্গে ২ উইকেট করে নেয়া রবীন্দ্র জাদেজা ও উমেশ যাদবও দুর্দান্ত বোলিং করেন। ভারতের যে ব্যাটিং স্তম্ভ, এ রান তোলা তো কোন ব্যাপারই না। এমনই ধারণা হয়। কিন্তু পার্থের উইকেট বলে কথা। এখানে বিশ্বের বাঘা সব ব্যাটসম্যানকেই হাবুডুবু খেতে হয়। ২০ রানেই যখন ধাওয়ান (৯) ও রোহিত শর্মা (৭) আউট হয়ে যান, তখনই একটু কাঁপন ধরে। কিন্তু এরপর বিরাট কোহলি দুর্দান্তভাবে এগিয়ে চলতে থাকেন। খুব বেশি দূর অবশ্য এগিয়ে যেতে পারেননি। দলীয় ৬৩ রানে ৩৩ রান করে কোহলি আউট হন। কোহলি আউটের পর ১৩৪ রানের মধ্যেই আরও ৩ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ৭৮ রানে রেহানে (১৪), ১০৭ রানে রায়না (২২), ১৩৪ রানে জাদেজার (১৩) আউটে ভারত শিবির একটু কেঁপে ওঠে। তখন ধোনি ও অশ্বিন মিলে সপ্তম উইকেটে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি না গড়লে ভারতেরও বিপদ আসন্নই ছিল। জয় ধরা দিত। কিন্তু আরও কষ্ট করে জিততে হতো। শেষ পর্যন্ত ভারত দলের বিপদের সঙ্গী ধোনি একদিকে বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। আরেকদিকে অশ্বিন (৩২ বলে ১৬*) উইকেট আঁকড়ে থাকেন। ৫৬ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৪৫ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে দেন ধোনি। দলের যখন ৬৬ বলে জিততে ২ রান দরকার এমন মুহূর্তে বাউন্ডারি হাঁকিয়েই জয় তুলে নেন ধোনি। ‘এ’ গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ডের মতো ভারতও ‘বি’ গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায়।
×