
আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। এই দিনে সেইসব মানুষদের সম্মান জানানো হয়, যারা নিঃস্বার্থভাবে অন্যের প্রাণ বাঁচাতে রক্তদান করেন। প্রতি ফোঁটা রক্ত যেন একজন মানুষের জীবনের শেষ আশার প্রদীপ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) উদ্যোগে ২০০৫ সাল থেকে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। রক্তের গ্রুপ আবিষ্কারকারী বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার-এর জন্মদিন স্মরণে দিনটির আয়োজন।
দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫,০০০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। অথচ চাহিদার তুলনায় সংগ্রহ অপ্রতুল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে বছরে প্রয়োজন প্রায় ১৮-২০ লাখ ব্যাগ রক্ত, যেখানে এর একটি বড় অংশ এখনো আত্মীয়স্বজন কিংবা পেশাদার দাতার ওপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি দেশের মাত্র ১% জনসংখ্যা নিয়মিত রক্ত দেন, তাহলে সব চাহিদা পূরণ সম্ভব।
একটি ব্যাগ রক্ত—তিনটি জীবন
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এখন এক ব্যাগ রক্ত থেকে রেড সেল, প্লাজমা ও প্লেটলেট আলাদা করে তিনজন রোগীকে দেওয়া যায়। বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া, ক্যান্সার, দুর্ঘটনার শিকার রোগী ও ডায়ালাইসিসে থাকা অনেকেই নিয়মিত রক্তের ওপর নির্ভরশীল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মুনতাসির রহমান বলেন— “রক্তদানে শরীর দুর্বল হয়—এ ধারণা ভুল। বরং নিয়মিত রক্তদান শরীরের মেটাবলিজম স্বাভাবিক রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।”
‘বাঁধন’ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এখন পর্যন্ত ১৮ বার রক্তদান করেছেন। তিনি বলেন, “রক্ত দিয়ে কারও প্রাণ বাঁচানো একধরনের পরম আত্মতৃপ্তি। প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞতা আজও মনে আছে—অচেনা এক মানুষকে নতুন জীবন দিতে পেরেছিলাম।”
সোহরাওয়ার্দী কলেজ শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন— “থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্বিত। এখন আমরা বন্ধুদের নিয়ে নিয়মিত ক্যাম্পেইন করি।”
পুরান ঢাকার গৃহিণী নাজমা আক্তার বলেন— “নিজের স্বামীর রক্ত না পেয়ে যে যন্ত্রণা পেরিয়েছি, তা আমাকে শিখিয়েছে—রক্তদান শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, এটি এক প্রকার মানবিক অপরিহার্যতা।”
রক্তদানে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ‘বাঁধন’, ‘সন্ধানী’, ‘রক্তবন্ধু’, ‘Bloodman Bangladesh’সহ বিভিন্ন সংগঠন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণ দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল পর্যায়ে রক্তদানের কর্মসূচি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাবও এসেছে অনেক চিকিৎসা সংগঠনের পক্ষ থেকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবারের রক্তদাতা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে—
“20 Years of Celebrating Giving: Thank You Blood Donors!”
এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে বিগত দুই দশকে যারা প্রাণ বাঁচিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং নতুন প্রজন্মকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রক্ত মানে জীবন।
এক ব্যাগ রক্ত দিতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট, অথচ এই ১৫ মিনিট কারও জন্য একটি নতুন জীবন, একটি নতুন সকাল। আসুন, আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি একটি সহমর্মী সমাজ, যেখানে কেউ রক্তের অভাবে প্রাণ হারাবে না।
সানজানা