ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ওষুধের দাম কমান

প্রকাশিত: ২০:১১, ৩ মে ২০২৪

ওষুধের দাম কমান

.

দুই সপ্তাহে ওষুধের দাম বেড়েছে থেকে ১৪০ শতাংশ’- শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই মাসে দেশের বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উৎপাদিত ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়েছে। অন্তত ৫০ ধরনের ওষুধের দাম ২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন ইনজেকশনের দাম। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন ওষুধ এবং ভিটামিনের দামও বেড়েছে। বাদ যায়নি জ্বর-সর্দির ট্যাবলেট-ক্যাপসুল বিভিন্ন অসুখের সিরাপও। রিট শুনানি শেষে ওষুধের দাম বাড়ানো রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ঔষধ প্রশাসনের অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের আদেশ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির তুলনায় দাম বাড়ানোর হার অস্বাভাবিক। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়াকে সাফাই হিসেবে দাঁড় করিয়েছে ওষুধ কোম্পানিগুলো।

নানা মাত্রায় বিভিন্ন অজুহাতে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। গরিব মানুষ সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা পেলেও সেখানে ওষুধ পাওয়া সম্ভব হয় না। স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক জরিপ অনুযায়ী, চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৪ শতাংশই এখন খরচ হচ্ছে ওষুধের পেছনে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ উৎপাদিত হয় দেশেই। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানায়, বিশ্বের অন্তত ১৫৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না।

দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বর্তমানে ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব। ওষুধ আসছে চোরাই পথেও। আসল না নকল বোঝার উপায় নেই। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ নকল হলে তা রক্ষার পরিবর্তে কেড়ে নেয় জীবন। অজ্ঞান করার ওষুধ হ্যালোথিন নকল প্রমাণিত হয়েছে ইতোমধ্যে। ভেজাল ওষুধে অঙ্গহানি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। লিভার, কিডনি নষ্ট করাসহ হতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা। অসংক্রামক ব্যাধির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ নকল ভেজাল ওষুধ বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মতে, দেশে ওষুধ কোম্পানি আছে ২৮৭টি। উৎপাদন করে প্রায় ২০০ কোম্পানি। বেশি পরিচিত ২০টি কোম্পানি। বাকিরা কি ওষুধ তৈরি করে, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অনেকে ভালো কোম্পানির নাম ব্যবহার করে নকল ওষুধ তৈরি বিক্রি করছে। ঢাকার ওষুধের সঙ্গে গ্রামের ওষুধের ভিন্নতা থাকে। দেশে অধিকাংশ ফার্মেসির নেই কোনো নিবন্ধন। সেসব দোকানেই বিক্রি হয় নকল ভেজাল ওষুধ। ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিটি থাকা সত্ত্বেও  তদারকি করা হচ্ছে না মাঠপর্যায়ে। নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ, নিবন্ধনহীন ওষুধ এবং সুরক্ষা সামগ্রীর ক্ষেত্রে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। ওষুধের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার বিষয়টিও মাথায় রাখা বাঞ্ছনীয়।

×