ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ভোজ্যতেলের দাম

-

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ভোজ্যতেলের দাম

সম্পাদকীয়

কথা রাখেননি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। ঈদের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই তারা প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ১০ টাকা। যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছে ১৬৩ টাকা, তা এখন বিক্রি হবে প্রতি লিটার ১৭৩ টাকায়। এর পেছনে ভোজ্যতেল আমদানিকারক-পরিশোধনকারীসহ পাইকারি ও খুচরা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করেন ভোক্তা সাধারণসহ সংশ্লিষ্ট মহল। স্বয়ং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ ও সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেছেন, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানো নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনকে কিছু জানায়নি, যা দুঃখজনক। সরকার জরুরিভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। ট্যারিফ কমিশন আলোচনা সাপেক্ষে পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম চার টাকা বাড়িয়েছে। 
উল্লেখ্য, ঈদকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাজার সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেল, চিনি, চাল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়, যা এখনো বহাল আছে। ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছিল ৫ শতাংশ। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকলেও ভোজ্যতেলের দাম মিলমালিকদের মর্জিমাফিক বাড়ানোর ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। মূলত ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে একতরফাভাবে দাম বাড়িয়েছেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা।

এর জন্য তারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির লক্ষ্যে ঈদের পর বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন, যেটি মূলত দাম বাড়ানোর অপকৌশল। সে অবস্থায় অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটতে না পারে, সেজন্য বাজারে কঠোর মনিটরিং জরুরি হয়ে পড়েছে। 
এর বাইরেও রয়েছে ভোজ্যতেলের ভেজালের বিষয়টি। বাজারে প্রাপ্ত অধিকাংশ ভোজ্যতেল, তা সে নামি-দামিসহ যে কোম্পানিরই হোক না কেন, ভিটামিন সমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়া যায় না বললেই চলে। বাজারজাতকৃত খোলা ভোজ্যতেলে তো নয়ই। ড্রামে বাজারজাতকৃত ভোজ্যতেলেও না। সেটি আরও বিষাক্ত। যেসব ড্রামে এসব তেল ভরে বাজারে বিক্রি করা হয় সেগুলো অধিকাংশ বিষাক্ত তথা রাসায়নিক কেমিক্যালের ড্রাম। এসব ড্রাম ভোজ্যতেল আমদানিকারক কোম্পানিগুলোর তৈরিও নয়।

পাইকারি বাজার থেকে হাজার হাজার ড্রাম কিনে সেগুলোতে ভোজ্যতেল ভরে বিক্রি করা হয় খোলাবাজারে। ধোয়াও হয় না। কেননা তাতে খরচ হয়। সে অবস্থায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও বি মেশানোর প্রশ্নই ওঠে না। ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইন- ২০১৩ বিদ্যমান থাকলেও এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহার জন্য। ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ আইন বিদ্যমান থাকলেও ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগের অবশ্য কর্তব্য হবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি মেশানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং বাজারে খোলা তেল বিক্রি বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ।

×