ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

আইএমএফের পূর্বাভাস

-

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আইএমএফের পূর্বাভাস

সম্পাদকীয়

বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমার পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, চলতি ২০২৪ সালে জিডিবি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এও বলেছে, ২০২৪ সালে তা কিছুটা বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ২০২৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ শতাংশ। আইএমএফের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের এপ্রিল সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে এই পূর্বভাস।

তদনুযায়ী চলতি বছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াতে পারে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী বছর তা কমে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ১ শতাংশে। ২০২৯ সালে মূল্যস্ফীতি কমে সাড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান, যা জনজীবনে চাপ সৃষ্টি করছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, চড়া মূল্যস্ফীতি ব্যক্তি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভোগ চাহিদা কমিয়ে দিচ্ছে।

এর সঙ্গে জ্বালানি ও কাঁচামালের সংকট, সুদহার বৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা আস্থা হারাচ্ছে দেশী-বিদেশী বিনেয়োগের। বাংলাদেশের আরেক বড় উন্নয়ন সহযোগী এডিবির মতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে বেসরকারি ভোগ চাহিদা। আইএমএফের পূর্বাভাসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী। আইএমএফের ১০টি শর্তের মধ্যে ৯টি শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশের ঋণের বাকি কিস্তি পেতে কোনো সমস্যা হবে না। 
জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে বছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পরেই সর্বোচ্চ জিডিপি অর্জনে সক্ষম হবে দেশটি কিছু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, যা হবে পাঁচ দশমিক ছয় শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বোচ্চ সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ভারত। বাংলাদেশের পরে জিডিপি অর্জনের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।

উল্লেখ্য, সরকার চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট বা বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ’ শীর্ষক ষান্মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বৈশ্বিক আর্থিক সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে চার ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও মনে করে বিশ্বব্যাংক।

এগুলো হলো- উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের ঝুঁকি। তবে এসব মোকাবিলাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
ইতোপূর্বে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ ঢাকা সফরে এসে বলেছেন, গত পাঁচ দশকে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশÑ যেটি হলো উন্নয়নের সেরা গল্প। কোভিড-১৯ অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই সামনে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও তিনটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

এগুলো হলো- নারীর ক্ষমতায়ন, মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু অভিযোজন। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেও কাজ করে চলেছে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। প্রণয়ন করেছে কর্মপরিকল্পনা। বাংলাদেশের এখন প্রধান লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এসবই বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের অব্যাহত সহযোগিতাসহ ইতিবাচক মনোভাবের বহির্প্রকাশ।

×