ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ২০:৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা

সম্পাদকীয়

যে কোনো দেশে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন অনুসারে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ও সামাজিক দুর্যোগের ফলে সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত অবস্থা মোকাবিলা, অসুস্থতা, বেকারত্বসহ নানা খাতে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় এক্ষেত্রে। বাংলাদেশে প্রতিটি জাতীয় বাজেটেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ থাকে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং দেশের জিডিপির ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ এ বরাদ্দ জিডিপির ৩ শতাংশে উন্নীত করার পরামর্শ দিয়েছেন।
বর্তমানে চড়া মূল্যস্ফীতির বাজারে মানুষের প্রকৃত আয় যাচ্ছে কমে। তাই নতুন করে ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাতার আওতায় আসছেন ১০ লাখ ২৬ হাজার জন। তারা সবাই অতিদরিদ্র। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মুখে ওএমএসসহ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে বাকি ১০ লাখ। পাশাপাশি দেশের সব প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হবে।

নতুনভাবে যুক্ত দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমানে অন্য কোনো ধরনের ভাতা ও খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন না। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসংক্রান্ত এসব সিদ্ধান্ত আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা হবে। আগামীতে নতুন করে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে দুই লাখ। একইভাবে বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যাও বাড়বে দুই লাখ। প্রতিবন্ধীর সংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার, মা ও শিশু সহায়তা উপকারভোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৬০ হাজার জন বাড়বে। পাশাপাশি নতুন করে হিজড়া সম্প্রদায় উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ২২৯ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া জটিল রোগে আক্রান্ত এমন ২০ হাজার মানুষকে দেওয়া হবে চিকিৎসা সহায়তা। 
অপ্রিয় হলেও সত্য, বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা যাদের পাওয়ার কথা থাকলেও তাদের অনেকেই আসলে সেটা পাচ্ছেন না। এ কারণে শুধু বিধবা ও বয়স্ক ভাতা খাতে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে বলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সমীক্ষায় এসেছে। সিপিডির হিসাব অনুযায়ী, এ অপচয় বন্ধ করা গেলে প্রকৃত বিধবা ও বয়স্ক আরও ২৫ লাখ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ও বরাদ্দ বেড়েছে, এটি আশার কথা। কিন্তু স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে দরিদ্র নয় এমন লোক যদি ভাতা পায়, তা হলে টেকসইভাবে দারিদ্র্য কমানোর কাজ কঠিন হয়ে পড়বে। তাই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে সুফল পেতে হলে সুষ্ঠু এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বণ্টন করা একান্ত প্রয়োজন।

×