ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জনবান্ধব গৃহায়ন

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

জনবান্ধব গৃহায়ন

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী এখনও গ্রামেই বাস করে। হতদরিদ্র, গৃহহীন, ভূমিহীনের সংখ্যাও কম নয়। গত দশ বছরের উন্নয়ন অগ্রগামিতায় বাংলাদেশ সরকার যে মাত্রায় জনকল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় এসেছে। পাঁচ মৌলিক চাহিদায় দেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই নয় তার চেয়েও বেশি নাগরিক অধিকারের একটি সূচকে জনগণের নৈমিত্তিক দাবি পূরণের অন্যতম। পরবর্তী সূচকে বাসস্থান কর্মপরিকল্পনাও সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমের একটি প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার। উন্নয়ন দশককে সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করে নির্বাচনী ইশতেহারে আরও যেসব বাকি কর্মযোগকে সম্পৃক্ত করা হয় সেখানে জনবান্ধব আশ্রয়ণ প্রকল্পকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া হয়েছে, যাতে গ্রামীণ সাধারণ জনপদ আর গোষ্ঠী এই নতুন উদ্যোগে শামিল হয়ে বাসস্থানের মতো আরও একটি মৌলিক অধিকারকে অর্জন করতে পারে। বাসস্থান কর্মসূচী সরকারের এই প্রথম নয়, এর আগেও গ্রামবাংলার বিভিন্ন স্থানে গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে তাদের প্রয়োজনীয় সমস্যাকে মোকাবেলার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সব কর্মপ্রক্রিয়া এখনও অসমাপ্ত পর্যায়ে, সার্বিক জনগোষ্ঠীর দ্বারে পৌঁছাতে পারেনি। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে এই প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয় চলমান কর্মযোগকে আরও সম্প্রসারিত আকারে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। সঙ্গত কারণে গৃহায়ন প্রক্রিয়াটি সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপে আরও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে সাধারণ জনগোষ্ঠীকে সম্পন্ন অবস্থায় নিয়ে আসবে। এরই আলোকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত অনেক কর্মসূচীতে স্বচ্ছতার প্রয়োগ বিশেষ বিবেচনায় এসে যাচ্ছে। সারাদেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আশ্রয়হীন মানুষের ঘর নির্মাণের নতুন আঙ্গিকে বিশেষ কর্মযোগ গ্রহণ করে দরিদ্রদের ভোগান্তি কমাতে চায়। এক সময় টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকার (কাবিটা) যে বরাদ্দ দেয়া হতো সেখানে নতুন কর্মসূচীর আওতায় গৃহনির্মাণ করে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় সেখান থেকে এই নতুন কার্যক্রম চালু করা হবে। ঘর তৈরির এই বৃহৎ ও মহৎ কর্মসূচীতে স্বচ্ছতার বিশেষ দায়ভাগ আছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিমত। এই স্বচ্ছতা নিরূপণে একটি বিশেষ সরকারী কমিটিও গঠন করা হবে, যাতে কোন অনিয়ম কিংবা গাফিলতির সুযোগ থাকতে না পারে। কমিটির নেতৃত্ব দেবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। যার তত্ত্বাবধানে স্বচ্ছতার ব্যাপারটি নজরদারি করবেন জেলা পর্যায়ের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কর্মকর্তারা। জনগণের নতুন জগতের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে এমন সব আধুনিক শুভ উদ্যোগ সাধারণ মানুষের কল্যাণেই যাবে। দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ এমন বার্তাকে সামনে রেখে যে বিরাট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কর্মসূচী বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে। ৬৪টি জেলায় ৬৪ হাজার গৃহনির্মাণের যে প্রক্রিয়া সামনে এগিয়ে যাবে সেখানে এই জুনেই প্রতি জেলায় ৫০০ করে ৬৪টি জেলায় প্রায় ৩২ হাজার বাড়ি তৈরি হয়ে যাবে। সারা বছরে সেই নতুন বাড়ির সংখ্যা হবে ৬৪ হাজার (ডিসেম্বর পর্যন্ত)। ৪০০ বর্গফুটের প্রতিটি সেমিপাকা ঘরে দুটো রুম এবং সঙ্গে বারান্দা এবং একটি করে রান্নাঘর ও বাথরুম সংযুক্ত করা হবে। প্রতি বাড়ির পেছনে সরকারের প্রায় দেড় লাখ টাকা করে খরচ হতে পারে। জনপ্রতিনিধিদের কাছে অর্থ বরাদ্দ না দিলেও স্থানীয় জনগণের গৃহহীনের তালিকা দেবে নির্বাচিতরা। তবে গৃহায়ন কর্মযোগের প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রয়োজনীয় শর্ত। এমন মহৎ কর্মযজ্ঞ যাতে সহজ এবং স্বাভাবিকভাবে কোন অনিয়ম ছাড়াই জনগণের দ্বারে পৌঁছে যায়-এটাই প্রত্যাশা।
×