ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির শোডাউন!

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ৩ নভেম্বর ২০১৭

বিএনপির শোডাউন!

চিকিৎসার নামে কয়েক মাস প্রবাসজীবন কাটিয়ে দেশে এসে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এ রকম একটি শোডাউনের প্রয়োজন ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়। ২৪ আগস্ট থেকে নতুন করে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা আসতে থাকে বাংলাদেশে। তখন তিনি দেশে ছিলেন না। দেশে ফিরে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গেলেন। এ থেকে যা প্রতীয়মান হয় তা হলো বিএনপি নেত্রী সপারিষদ কক্সবাজারে গেছেন বেশ পরিকল্পনা ও আটঘাট বেঁধেই। দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে না থাকায় এবং বেগম জিয়ার অবর্তমানে দলটি কার্যত পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ নালিশ পার্টিতে। দলীয় কার্যালয়ে বসে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা একাধিক টিভি-ক্যামেরার সামনে ‘যা খুশি তা-ই’ বলা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না তাদের। কেননা, একে তো নেত্রী দেশের বাইরে, অন্যদিকে মাঠে নামার মতো যথেষ্ট সংখ্যক সাহসী কর্মীর অভাব। সুতরাং নেত্রীর দেশে প্রত্যাবর্তনের পর মাঠে নামা এবং কর্মী ও সমর্থকদের ‘যুদ্ধংদেহী’ মনোভাব প্রত্যক্ষ করার প্রয়োজন ছিল উচ্চকোটির নেতানেত্রীদের। তা তারা প্রত্যক্ষ করেছেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে কয়েকশ’ গাড়ির বহর নিয়ে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের এই সফরটি ছিল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা স্বচক্ষে পরিদর্শন, সমবেদনা জানানো ও ত্রাণ বিতরণ। সেখানে শোডাউনের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড়, লটবহর, স্লোগান-পাল্টা স্লোগান প্রত্যাশিত ছিল না মোটেও। কার্যত তা-ই ঘটল। আর তার ফলে এটা শুধু মানবিকতা প্রদর্শন ও সমবেদনা জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না। বরং শেষ হলো ত্রাণের পরিবর্তে রাজনীতির পেশীশক্তি প্রদর্শন, হম্বিতম্বি, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ সর্বোপরি ব্যাপক জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্য দিয়ে। এত সুবিস্তৃত যাত্রাপথে স্বভাবতই সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট ও জনজট। তাতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হয়েছে সীমাহীন। অন্যদিকে আসা-যাওয়ার পথে ফেনীর মহীপালে একবার হয়েছে সশস্ত্র হামলা, আরেকবার পেট্রোলপাম্পে দাঁড় করিয়ে রাখা বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা। অতঃপর এ নিয়ে সরকার সমর্থিত দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দীর্ঘ বাহাস ও চাপানউতোরের খেলা। যা প্রকারান্তরে দেশের রাজনীতির কদর্যতাকে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তিই করেছে মাত্র। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি মাঠে তার শক্তি পরীক্ষা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণের নামে মানবিকতার পরিবর্তে শক্তি প্রদর্শন কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। পথে পথে জনদুর্ভোগ কমানো এবং যানজটের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত ছিল দলটির। দীর্ঘ পথে দেখা গেছে প্রায় সর্বত্রই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, মাইকিং ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থীরও শক্তি প্রদর্শন ও স্লোগান দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রে দলীয় সংঘাত, হানাহানি, মারামারি অপ্রত্যাশিত নয়। ফেনীতে গণমাধ্যমের একাধিক গাড়িতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলার নেপথ্যে অডিও টেপে বিএনপির এক নেতার কণ্ঠস্বর শোনা গেছে। ফেরার পথে মহীপাল ফিলিং স্টেশনে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও নিকট অতীতের জামায়াত-বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওসহ ব্যাপক বোমাবাজির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পুলিশী তদন্ত এবং মামলায়ও দলীয় কোন্দল ও সংঘাতের বিষয়টি উঠে এসেছে। মনে রাখতে হবে যে, ফেনী বিএনপির ভোট ব্যাংক তথা দুর্গ বলে পরিচিত। সেক্ষেত্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগের জন্য প্রতিপক্ষের দিকে আঙ্গুল তুলে তেমন ফায়দা উঠবে বলে মনে হয় না। তদুপরি, উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিএনপি নেত্রীর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও পড়েছে প্রশ্নের মুখে। সেদিন তিনি যে পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করেছেন, সে তুলনায় অনেক বেশি বিঘ্নিত হয়েছে অন্যান্য শিবিরে সরকারী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। সফরের সার্বিক প্রেক্ষাপটে সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়নে এসব বিবেচনায় রাখলে দল হিসেবে উপকৃত হবে বিএনপি। মোটকথা, নির্বাচনমুখী দল হিসেবে অতীতের ভুলের বৃত্ত থেকে অবিলম্বে বেরিয়ে আসতে হবে বেগম জিয়াকে।
×