ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অরাজকতা বাঞ্ছনীয় নয়

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১২ জুন ২০১৬

অরাজকতা বাঞ্ছনীয় নয়

শিক্ষা স্বাস্থ্য জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের দোরগোড়ায় এই সেবা পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া এবং তা নিশ্চিত করা। আর এই দুটি খাতে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের কর্তব্যবোধ অত্যধিক থাকার কথা। স্বাস্থ্যসেবা পাবার অধিকার জনগণের থাকলেও দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। আবার যাদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তারা বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা এবং সুচিকিৎসার ঘাটতি তাদের বিদেশমুখী করেছে। দেশীয় চিকিৎসার মান নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্নও ওঠে। আবার চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারিত হওয়ার ঘটনাও কম নয়। এই খাতের নেতিবাচক দিক অনেক বেশি। তথাপি সাধারণ মানুষ এই চিকিৎসার ওপরই নির্ভরশীল। কিন্তু তারপরও তারা সুচিকিৎসা পায়, সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়, এমনটা হয় না প্রায়শই। গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার হাল করুণ, সে অনেককাল ধরেই। তথাপি বর্তমান সরকার সচেষ্ট এই দুটি খাতের সম্প্রসারণ ও বিস্তার ঘটাতে। একই সঙ্গে সকল জনগণকে এই সেবার আওতায় নিয়ে আসতে। জনগণের এই চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে বাস্তবে অনেক অমিল পাওয়া যায়। বিশেষত সেবা প্রদানকারীদের গণমুখী হতে না পারা, মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে না পারা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বিস্মৃত হয়ে আত্মোন্নতি সাধনে নিমগ্ন হয়ে পড়া। আর সে কারণেই নিজেদের স্বার্থে দেখা যায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে কিংবা বিদ্যালয়ে ক্লাস না নিয়ে ধর্মঘট পালনে অত্যুৎসাহী হয়ে উঠতে। কথায় কথায় ধর্মঘট পালন করার অধিকার প্রমাণে বাহুবলও প্রদর্শিত হয় কখনও সখনও। শিক্ষার্থী ও রোগীকে জিম্মি করে এই যে আত্মস্বার্থে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করাÑ সে তো অপরাধেরই নামান্তর। জনগণ তথা দেশ ও জাতির প্রতি অশ্রদ্ধা ও দায়িত্ব পালনে অনীহাই বলা যায়। সরকার শিক্ষক, চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগে যথেষ্ট দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করে আসছেন। নিয়মনীতি মেনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে নিয়োগদান করা হলেও অনেকে বিধিবিধান মেনে চলতে আগ্রহী নয়। যেমন সিনিয়র স্টাফ নার্স পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগের পদক্ষেপ নেয়া হলে অযৌক্তিকভাবে নার্সরা তা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নেমে পড়েন। প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাথে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে আসছিলেন। নার্সদের দুটি সংগঠন আগের মতো জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি জানায়, তারা পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগে রাজি নয়। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং আরও আলোচনার মাধ্যমে দাবি বিবেচনার কথা বলেন। তারা কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু হঠাৎ নার্সদের একটি অংশ দুই দফা দাবি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ধানম-ির বাসার সামনে অবস্থান নেয়। এই অবস্থান এক ধরনের ষড়যন্ত্র বলে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন। অথচ এ ধরনের কর্মকা-ে জড়িত হওয়া তাদের পেশার বৈপরীত্য বলা যায়। সরকার পিএসসির মাধ্যমেই শেষতক পরীক্ষা নিয়েছে। অপরদিকে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিধিবিধান রয়েছে। সরকার সেভাবে নিয়োগও দিয়ে আসছে। কিন্তু প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকরা নানা অজুহাতে ধর্মঘট পালন করেন। এতে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সৃষ্ট পদসহ সব সদস্য পদে প্যানেল শিক্ষক নিয়োগে সরকার নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। শিক্ষাকে সর্বত্র সম্প্রসারিত করে দেশে শিক্ষিত জনগণের সংখ্যা বাড়াতে সরকার বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রায়শই শিক্ষকরা নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ে কঠোর কর্মসূচী নেন। দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথটি নেয়া হয় না। ফলে বাড়ে অরাজকতা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাও ধর্মঘট পালন করেন বেতন-ভাতার দাবিতে। যা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হয়। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে শিক্ষার যে ক্ষতি হয়, তা আর পূরণ হয় না। সে জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা সমাধানে ধর্মঘট, আন্দোলন পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান জরুরী। এই দুটি খাতে অরাজকতা কোনভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ এসব গণবিরোধী আচরণ।
×