ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্পর্শকাতর জায়গাগুলো নির্ধারণ জরুরি

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ১১:১০, ৫ জুন ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্পর্শকাতর জায়গাগুলো নির্ধারণ জরুরি

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বহু বিষয় এখনো অস্পষ্ট, অনির্ধারিত। সময়ের প্রেক্ষাপটে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দাবি তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ। সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে তিনি এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

ড. সাখাওয়াত বলেন, “ইতিহাসের প্রয়োজনে কিছু বিষয় নির্ধারিত হওয়া দরকার।” তিনি মনে করেন, “যেটা ৫৪ বছরে হয়নি, এখন হলে মন্দ না। তবে এটা প্রায়রিটি না। প্রায়রিটি সংস্কার, বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্য এবং গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি সঠিক নির্বাচনের দিকে যাওয়া, দেশকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়া এসবই হলো প্রায়রিটি।”

তিনি আরও বলেন, “এই কাজগুলো যেহেতু স্পর্শকাতর, তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে, সরকারের তরফ থেকে উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিয়ে এগোনো উচিত ছিল। তাহলে সংবাদমাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতো না, এমন রিপোর্ট আসত না।”

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রকাশিত গেজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুরোটা পড়লেও অস্পষ্ট মনে হয় না। সংবাদমাধ্যমে যারা রিপোর্ট করেছেন, তারা হয়তো না বুঝে বা কারও প্ররোচনায় এই কাজ করেছেন। এতে অপ্রয়োজনীয় একটি ইস্যুকে সামনে এনে সেনসিটাইজেশন করা হয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যাদের মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন অনেকের বয়স নির্ধারিত ছিল ১২ বছর ৬ মাস। অথচ ২১১১ জন সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার বয়স এই নির্ধারিত বয়সেরও কম। শিশু মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও তাদের সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মুজাম্মেল হকের সনদ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি আরও অনেক মন্ত্রী ও বিচারপতির নাম উঠে এসেছে।”

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাঁকটি কোথায়, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় যে জায়গাটায় ফাঁক রয়ে গেছে, সেটা হলো শহীদের সংখ্যা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যদি ৩০ লাখ না হয়ে ৪০ লাখ হয় কিংবা ২০ লাখ হয়, তাতেই কি আমাদের গৌরব বা অর্জন বড় বা ছোট হয়ে যায়?”

তিনি বলেন, “এই স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সরকারি গেজেটে শহীদ পরিবারের তালিকায় মাত্র ৬৭৫৭টি নাম আছে, যার মধ্যে আবার ভাতা পাচ্ছে ৫৩৫৮টি পরিবার। বাকি ১৩৯৯টি পরিবারের কোনো হদিসই নেই। ৫৪ বছরে কোনো সরকার শহীদদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা করেও এগোয়নি।”

শহীদ পরিবার এবং জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও স্বীকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যিনি ফেরত আসেননি, শহীদ হয়েছেন, তার পরিবারের স্যাক্রিফাইস বড় না যারা যুদ্ধ করে ফেরত এসেছেন, তাদের কন্ট্রিবিউশন বড়? রাষ্ট্র কেন সেই শহীদ পরিবারকে যথাযথভাবে সম্মানিত করতে পারেনি? কেন প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে নামফলক টানানো হয়নি, যেখানে পরবর্তী প্রজন্ম গর্ব করে দেখতে পারবে, আমার পরিবারের কেউ দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে?”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই নাম নির্ধারণ, সংখ্যা নির্ধারণ অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। সরকারের উচিত ছিল এগুলো নিয়ে আগে থেকেই পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেয়া। সেটা না করায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।”

 


সূত্র:https://tinyurl.com/56uz8k3m

আফরোজা

×