ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অধিকার-ভিত্তিক নাগরিক সংগঠনগুলোর আইএমএফ ঋণের শর্তের সমালোচনা

প্রকাশিত: ২১:১৮, ৯ মে ২০২৪

অধিকার-ভিত্তিক নাগরিক সংগঠনগুলোর আইএমএফ ঋণের শর্তের সমালোচনা

অধিকারভিত্তিক নাগরিকদের মানববন্ধন 

ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইক্যুইটিবিডি) এর সমন্বয়ে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে অধিকারভিত্তিক নাগরিক গঠনগুলো।  

সম্প্রতি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের ওপর আরোপিত কঠোর শর্তের প্রতিবাদ করেছে। বক্তারা আইএমএফের পরামর্শের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের আহ্বান জানান যেগুলো কিনা সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল এবং সরকারের উন্নয়নের জন্য আইএমএফ ঋণের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ ইত্যাদির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা উল্লেখযোগ্যভাবে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। 

ফলস্বরূপ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রিজার্ভ ২০২১ সালে ৪১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালে ১৯.৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা সরকারকে গত বছর আইএমএফ  থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের চুক্তি করতে প্ররোচিত করে। আইএমএফ এখন বাংলাদেশে তার তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য আলোচনায় রয়েছে, তবে তাদের কঠোর শর্ত জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

তাদের একটি শর্ত হোল, ডলার খরচ বাঁচাতে বিদ্যুৎ, ফার্নেস অয়েল এবং গ্যাসের উপর ভর্তুকি বন্ধের দাবি। কিন্তু প্রশ্ন হোল, আইএমএফ মিশন বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার বা মানি লন্ডারিং- এর মতো জটিল সমস্যাগুলি নিয়ে কোন কথা বলছে না বা রাজস্ব বাড়ানোর উপায়গুলি নিয়েও কোন সুপারিশ করছে না। এর পরিবর্তে, তারা সাধারণ নাগরিকদের উপর ভারী বোঝা চাপিয়ে পরোক্ষ কর বাড়ানোর সুপারিশ করছে। বক্তারা জনসাধারণের উপর শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা চাপানোর পরিবর্তে ভর্তুকির যৌক্তিককরণ এবং অর্থ পাচারকারীদের দমনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের বদরুল আলম, ওয়াটার কিপারের ইকবাল ফারুক, এনডিএফ থেকে ইবনুল সাইদ রানা, সিএসআরএল থেকে জিয়াউল হক মুক্তা, কোস্ট ফাউন্ডেশনের ওমর ফারুক এবং ফেরদৌস আরা রুমি সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ইক্যুইটিবিডির সাথে সংহতি প্রকাশ করে এসব বক্তব্য দেন। মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডির সচিবালয় সমন্বয়কারি মোস্তফা কামাল আকন্দ, সভাপতিত্ব করেন ইক্যুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী।

রেজাউল করিম চৌধুরী তার বক্তব্যে জোর দিয়েছিলেন যে বিদ্যুৎ, তেল এবং গ্যাসের জন্য ভর্তুকি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলোর দ্বারা দরিদ্র মানুষ উপকৃত হোয় এবং কৃষি সহায়তার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। তিনি ভর্তুকি কমানোর জন্য আইএমএফের শর্তের সমালোচনা করেন, এর পরিবর্তে সরকারকে টাকা পাচার রোধ করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। বদরুল আলম বলেন যে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা বা দেউলিয়া হওয়া এবং অর্থ পাচার নিয়ে আইএমএফের উদ্বেগের অভাব তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তিনি বলেন যে ভর্তুকি বন্ধ বা এই কঠোর শর্তগুলির পালন কৃষি উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বাবস্থাকে দুর্বল করে তুলবে।

অন্যান্য বক্তাও তাদের বক্তব্যে সহমত পোষণ করেন। ইকবাল ফারুক বলেন, বাংলাদেশকে কেবল এমন ঋণ গ্রহণ করা উচিত যা শর্তমুক্ত। ইবনুল সাঈদ রানা বলেন যে কৃষি উৎপাদনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় কৃষকদের তাদের কাজ চালিয়ে যেতে নিরুৎসাহিত করছে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই কৃষিতে অর্থাৎ বিদ্যুৎ, সার, ডিজেলে ভর্তুকি কমানো উচিত হবে না। জিয়াউল হক মুক্তা উল্লেখ করেন যে মানি লন্ডারিং এবং বিভিন্নভাবে টাকা পাচার আজ দেশের এই উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী। তিনি টাকা পাচারকারিদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।

ওমর ফারুক বলেন যে বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করেছে , যার ফলে মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৮০ ডলার। এছাড়া, মানি লন্ডারিং এবং অফশোর ব্যাংকিংয়ের কারণে বছরে প্রায় ১২০০০ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়।এর প্রভাব পরে জনগণের উপর। তিনি ভ্যাট এবং পরোক্ষ কর বৃদ্ধির জন্য আইএমএফের পরামর্শেরও সমালোচনা করেন। 

ফেরদৌস আরা রুমি বলেন যে, লেনদেনে ১৫% ভ্যাটের জন্য আইএমএফের প্রস্তাবটি ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে ভোক্তাদের উপর চাপানো অন্যায়ভাবে বোঝা। কারণ বাবসায়িরা ভোক্তাদের উপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে দেন। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য সরকারের উচিত ধনীদের আয়ে প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

 

কাওসার//শহিদ

×