ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছুটির দিনে মার্কেট শপিংমলে জনস্রোত

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২৯ মার্চ ২০২৪

ছুটির দিনে মার্কেট  শপিংমলে  জনস্রোত

ঈদের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে মার্কেটে ভিড় বাড়ছে

এগিয়ে আসছে ঈদ। হাতে খুব বেশি সময়ও নেই। ঘুরে ঘুরে পণ্য দেখার দিনও শেষ। এখন শুধুই কেনাকাটার পালা। শুক্রবার ছিল মাসের শেষ ছুটির দিন। মাসের শেষ হওয়ায় মানুষের হাতে টাকা ছিল না তা বলা যাবে না। অন্তত বিপণিবিতান-শপিংমলে ক্রেতাদের স্রোত দেখে তা বলার উপায় নেই। ক্রেতারা বলছেন, যারা ঈদে গ্রামে যাবেন, তাদের ঈদযাত্রার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। আগেভাগে পরিবার পাঠিয়ে দিতে হবে। এজন্য সপ্তাহেই কেনাকাটা শেষ করতে চায়। আর বিক্রেতাদের ভাষ্য, অনেক বেসরকারি চাকরিজীবীর বেতন হয়নি। আগামী শুক্রবারেই বিক্রির ধুম লাগবে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকালে ঘুম ভেঙেই রাজধানীবাসীর গন্তব্য থাকে বাজারে ছোটা। তবে এই শুক্রবারটি ছিল ভিন্ন। রোজার দিনে খাওয়া-দাওয়ার ঝামেলা থাকে না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই যেন ছুটেছে শপিংমল, মার্কেট বিপণিবিতানে। যেকারণে সকাল থেকেই মার্কেটগুলোতেও ক্রেতাদের চাপ ছিল প্রচন্ড রোদ্র উপেক্ষা করে যারা দিনে বের হননি। তারা সন্ধ্যার পর বিপণিবিতানে গিয়েছেন সপরিবারে। শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউসিয়া, বসুন্ধরা শপিংমল, মিরপুরের বেনারসি পল্লী, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, পলমল শপিংমল, মৌচাক, খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট ফরচুন শপিংমলে জনস্রোত নামে। তবে সব ছাপিয়ে নিউমার্কেটে ক্রেতাদের চাপ ছিল সর্বোচ্চ। নিউমার্কেট চাঁদনীচকে ঢোকা যাচ্ছিল না। দূর থেকে দেখা যায় শুধুই মানুষের মাথা হাতে শপিং ব্যাগ। বিপণিবিতানগুলোর বিক্রেতাদেরও কথা বলার সময় নেই।

কাপড়ের তুলনামূলক মান সহনীয় দামের কারণে মধ্যবিত্তের কাছে নিউমার্কেটের খ্যাতি আছে। কিন্তু দামাদামি নিয়ে অনেক সময় শোরগোল হয়। এখন সবার হাতেই সময় কম। যেকারণে বিক্রেতারাও আকাশ ছোঁয়া দাম চাইছেন না। এই মার্কেট আশপাশে সব ধরনের সব বয়সীর কাপড় পাওয়া যায়। একারণে রমজানের প্রায় শুরু থেকে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই বিক্রি বেড়েছে অনেক। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। নিউমার্কেট ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই ক্রেতার উপস্থিতি ভালো দেখা যাচ্ছে। শুরু থেকেই মানুষজন অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এখানে কেনাকাটা করতে পারছেন। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক মার্কেটে দেখভাল করছি।

বছর ঈদের পর পরই বাংলা নববর্ষ। সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীদের পকেটেও তাই ঢুকবে ঈদের বোনাস বৈশাখী ভাতা। যেকারণে বাজারে বিক্রিবাট্টাও বেড়েছে। তবে মাসের শুরুতে বেসরকারি কর্মজীবীদের পকেট ভারি হবে। ঈদের শেষ সপ্তাহেও জমজমাট থাকবে কেনাবেচা।

ঈদ বাজারে বিভিন্ন আউটলেটে নানা রকম ছাড় দিয়েছে। ছাড় দেওয়া দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছেও বেশ। তবে কেনার ক্ষেত্রে পণ্যের মানে গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানান, প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে মানুষের কেনাকাটা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রিয়জনকে উপহার দিতে পোশাক, গয়না, জুতা থেকে শুরু করে নানা পণ্যের চাহিদা থাকে। আর ক্রেতাদের চাহিদা প্রয়োজনকে সামনে রেখে ফ্যাশন হাউস, হোটেল-রেস্তোরাঁ, ব্যাংকগুলোও দিতে থাকে নানা অফার। এর মধ্যে এয়ার টিকিট কক্সবাজারে থাকার সুযোগ বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহারেও ব্যপক ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। বেইলি রোডে আর্টিসান শোরুমের বিপণন কর্মী জাহিদ হোসেন জানান, বনতুন পোশাকে ছাড় খুব একটা না থাকলেও অনেক পোশাকে এবারও ছাড় দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর অফার অনুযায়ী ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে ছয়টি ব্যাংকের কার্ডে কেনাকাটায় ১৫ শতাংশ ছাড় রয়েছে। ছাড়া বিকাশে ক্যাশব্যাক অফারও আছে।

বছরে এই ঈদ একবারেই আসে। এই উৎসব উদযাপনে কার্পণ্য থাকে না কারো। দীর্ঘদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। থাকে ঘরে ফিরে প্রিয়জনের সঙ্গে উদযাপনের চেষ্টা। এবার বাংলা বর্ষবরণ থাকায় উদযাপনে লাগবে নতুন মাত্রা। গ্রীষ্মের ঈদ হওয়ায় এবার পোশাকেও লেগেছে গরমের ছোঁয়া। নারী-পুরুষের বেশির ভাগের পোশাক কিনছেন হালাকা রঙের। সুতি, লিলেন, সিল্ক ভিসকসের কাপড় বিত্রি বেশি হচ্ছে। রয়েছে ব্লক, প্রিন্ট, সুই-সুতার কাজ। গরমে সুতি পাতলা কাপড়ের জমকালো পোশাক মেয়েদের বেশি আকৃষ্ট করছে এবার। এর বাইরে কিছুটা ঢিলে-ঢালা পোশাকের ধারা দেখা যাচ্ছে এবার। মেয়েদের কামিজের ঝুল ঘের বেড়েছে অনেকটাই।

বসুন্ধরা শপিংমলের লেভেল টুতে ইল্লিয়েন, এমব্রেলা, লুবনান, ইনফিনিটি, দর্জিবাড়ি, জেন্টলপার্কে পাঞ্জাবি বেচাকেনার ধুম দেখা। ফ্যাশন হাউসগুলোও বলছে, পাঞ্জাবি-থ্রিপিসসহ অন্যান্য পোশাকে এবার ঈদের সঙ্গে বৈশাখের নকশা রঙের ছোঁয়া রয়েছে। রয়েছে কৃষ্ণচূড়ার রং নকশার ছটা। অনায়াসে একটি পোশাক দিয়ে দুটি উৎসব কাটিয়ে দেওয়া যাবে।

মিরপুরের বেনারসি পল্লীতেও শুক্রবার ক্রেতাদের চাপ দেখা গেছে। ঢাকাই মসলিন, জামদানি, টাঙ্গাইল তাঁত হাফ সিল্ক, রাজশাহী সিল্ক, জর্জেট, কাতানসহ নানা ধরনের বাহারি শাড়িতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন নারীরা। দোকানগুলোতে পাইকারি বিক্রি শেষ হওয়ার পথে। শুরু হয়েছে খুচরা বিক্রি। মসলিন, বেনারসি, হাফসিল্কের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি। মানভেদে এসব শাড়ির দাম ২৫০০ থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে -১০ হাজার টাকার মধ্যে শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বেশি। ক্রেতাদের বেশি দাম নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

×