
জনকণ্ঠ ভবনে ‘নিরাপদ খাদ্য, সুস্থ জীবন ও সমৃদ্ধ মানবসম্পদ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ
দেশ উন্নতির দিক দিয়ে যেমন এগিয়েছে, তেমনি খাদ্য ঝুঁকিতেও এগিয়েছে। সবাই খাদ্য নিরাপদতা নিশ্চিতের কথা বলছে। এ বিষয়ে ১৮টি সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি যারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাদের অনেকের নিরাপদ খাদ্য নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই বলে মনে করেন বক্তারা। তাদের মতে, নিরাপদ খাদ্য নিয়ে ছোট বেলা থেকে সচেতন করলে এর ইতিবাচক প্রভাব থেকে যাবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে নিরাপদ খাদ্যের আধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করলে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে প্রস্তুতি, সরবরাহ ও প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে জড়িত সকলকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিরপাদ খাদ্য নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।
রবিবার দুপুরে দৈনিক জনকণ্ঠ কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। ৭ম ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে ‘নিরাপদ খাদ্য, সুস্থ জীবন ও সমৃদ্ধ মানবসম্পদ’ শীর্ষক বিষয় নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। জনকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদক কাওসার রহমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা, বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রজেক্টের চিফ অব পার্টি মাইকেল জে পার, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম, বিশিষ্ট অভিনেতা ও চিকিৎসক ডা. এজাজুল ইসলাম, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মনজুর-ই খোদা তরফদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধমূলক এবং সামাজিক ওষুধ অনুষদের ডিন ডা. মো. আতিকুল হক, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সংগীতা আহমেদ, বিসেইফ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মিটন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের প্রধান সীমাবদ্ধতা হচ্ছে- মনিটরিং এবং রেগুলেটারি কার্যকর করার জন্য যথেষ্ট জনবল না কথা। আবার নিরাপদ খাদ্য নিয়ে আমরা দেরিতে কাজ শুরু করেছি। আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা ছিল না। এর সঙ্গে স্টক হোল্ডাররাও জড়িত। নিরাপদ খাদ্য নিয়ে মানসিক, সামাজিক দিক থেকেও কাজ করতে হবে। প্রাথমিকের বইতে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা, সেটি নিয়ে ভাবছি। প্রতীকী অর্থে স্কুলে ট্রেনিং ও সচেতনতার কাজ করা হচ্ছে। তাছাড়া নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গোল টেবিল বৈঠক করার আগ্রহও প্রকাশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য- স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট নাগরিক হতে হবে। স্মার্ট নাগরিক স্মার্ট খাদ্য ছাড়া সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, নিরাপদ খাদ্য খুবই দরকার। আগের তুলনায় এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আরও দরকার আছে। অনেকেই আছেন গরিব, আবার অতিদরিদ্র। তারা খেতেই পারে না। আবার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবে কিভাবে। তারা যা পায় তা-ই খায়। কেউ কেউ বলে, এসব খেয়েও তো বেঁচে আছি। বেঁচে আছে ঠিকই, তবে অসুস্থ হচ্ছে। খাবার উৎপাদন, প্রস্তুতি, সরবরাহ থেকে শুরু করে টেবিলে যাওয়া পর্যন্ত নিরাপদ হতে হবে। তবেই সেটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য। অনেকেই ফ্রিজিং ব্যবস্থা জানেন না। কাঁচা খাবার আর রান্না করা খাবার একত্রে রাখেন। এসব নিয়ম মানতে হবে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন দরকার। পর্যাপ্ত শাকসবজি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। স্ট্রিট ফুড যারা বিক্রি করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের সড়কে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে সিটিকরপোরেশনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না এ বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সঙ্গে আমাদের আলোচান চলছে। তিনি বলেন, আমারা এ বছর সাতটি গবেষণার ফল হাতে পাব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গেও একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। সেটি হয়ে গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আমাদের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি জেলায় প্রতিটি স্কুলের একজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন।
বিশিষ্ট অভিনেতা ও চিকিৎসক ডা. এজাজুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিরাপদ করতে হলে দুটি বিষয় করতে হবে। প্রথমত, স্বাস্থ্য শিক্ষা। সেটি যিনি খাচ্ছেন তার জন্য নয়। যিনি খাবার তৈরি করছেন, তার জন্য। আর এটি যদি বেশি বেশি প্রচার করা হয় তাহলে মানুষ সহজে জানতে পারবে। দ্বিতীয়ত, আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকতে হবে। একই তেল দিয়ে একাধিকবার বিভিন্ন খাবার ভাজা হচ্ছে। কিন্তু ওই তেল ব্যবহারের উপযোগী কিনা, সেটি যিনি খাবার তৈরি করছেন তিনি যাচাই করছেন না। আমরা যারা কর্তৃপক্ষ রয়েছি, তারাও এ বিষয়ে সঠিকতা প্রয়োগ করছি না। এখানেই সঠিক আইন ও আইনের প্রয়োগ থাকার দরকার।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, খাদ্য আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আবার এই খাদ্যই আমাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদি সেটি নিরাপদ খাদ্য না হয়। ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের শরবত, পিঠা দেদার বিক্রি হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অনিরাপদ। এসব অনেকে খায় না। আবার অনেকে খেয়ে থাকেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আরও বেশি বেশি কাজ করা উচিত। নিরাপদ খাদ্যের জন্য সবার সমন্বয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকা দরকার।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, সোর্স থেকে খাদ্যকে নিরাপদ করে করে এগোতে হবে। সরবরাহের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ খোলা তেল খেয়ে থাকেন। কিন্তু হঠাৎ করে আইন করে যদি খোলা তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তারা তেল খেতে পারবেন না। তিনি বলেন, খাদ্য সব জায়গায় নিরাপদ রাখা উচিত। কিন্তু দেখা যায়, মাছ-মাংস যে বঁটি দিয়ে কাটা হয়, সালাদও সেই বঁটি দিয়ে কাটা হয়। তাহলে খাদ্য তো অনিরাপদ হবেই। এটি ছোট বেলা থেকেই সচেতন করতে হবে।
বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রজেক্টের চিফ অব পার্টি মাইকেল জে পার বলেন, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে দুইটা কাজ এখন প্রয়োজন। একটি হলো মানুষের চিন্তার পরিবর্তন ও দ্বিতীয়টি হলো সমাধান। কিন্তু মানুষের চিন্তার পরিবর্তন এই দেশে বেশ কঠিন। শুধুমাত্র খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে এমন কাজ সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। আন্তর্জাতিক খাদ্য রপ্তানি ও বাণিজ্যে খাবারের গুণমান নির্ধারণ গুরুত্বপর্ণ। এমন কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। সমন্বয় না থাকা নিরাপদ খাদ্যের অন্তরায়।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, নিরাপদ খাদ্যের জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ধর্মীয় নেতারা উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। আইন তো অল্প দিন হয়েছে। এখন দরকার সচেতনতা। ছোট্ট শিশুদের মিড ডে মিলের বিষয়ে আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, পুষ্টিকর বিস্কুট খাওয়াতে। আমার অভিমত, এই বিস্কুটের চেয়ে বেশি নিরাপদ ও পুষ্টিকর হল ৬০ গ্রাম ওজনের একটি মুরগির ডিম। সরকার যেন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধমূলক এবং সামাজিক ওষুধ অনুষদের ডিন ডা. মো. আতিকুল হক বলেন, দেশ উন্নতির দিক দিয়ে যেমন এগিয়েছে তেমনি খাদ্য ঝুঁকিতেও এগিয়েছে। যতই আইন করা হোক লাভ নেই। যদি সচেতনতা না থাকে। সচেতনতা হতে হবে তথ্যভিত্তিক, গবেষণা ভিত্তিক। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু নিরাপদ খাদ্য নিয়ে গভীর জ্ঞান না থাকায় আমরাও (চিকিৎসকরা) বলতে পারছি না। তবে উন্নত দেশগুলোতে নিরাপদ খাদ্যের ওপর শিক্ষা রয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগ চালু করার প্রস্তাব দেন তিনি। এতে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন এবং সেই অনুযায়ী মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সংগীতা আহমেদ বলেন, আগে টয়লেটের পর সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার একটি বিজ্ঞাপন বহুল প্রচারিত ছিল। যার প্রভাব আমাদের নাগরিক জীবনে পড়েছে। বিজ্ঞান বলছে, কাঁচা সবজি ও মাছ মাংস এক জায়গায় রাখা যাবে না। একটি বঁটি বা ছুরি দিয়ে মাংস কাটলে না ধুয়ে সেই বঁটি ব্যবহার করা ঠিক নয়। এসব ছোট ছোট বিষয়ও মানবদেহে অনেক ঝুঁকি বাড়ায়। নিরাপদ খাদ্য দিবসকে কেন্দ্র করে গবেষকদের একটি কনফারেন্সের আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য মো. রেজাউল করিম বলেন, যে খাদ্য স্থান, কাল ও পাত্রভেদে উপযোগিতা ও পরিমাণ বিবেচনায় গ্রহণের ফলে কোনো রোগ সৃষ্টির কারণ না হয়ে মানুষের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে তাই নিরাপদ খাদ্য। কিন্তু অনিরাপদ খাদ্যের কারণে মানুষের শরীরে রোগ হচ্ছে। রোগের কারণে অনেক পরিবার দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যায়। মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য সর্বপ্রথম সামনে আসে খাদ্যের নিশ্চয়তা। মানুষ প্রক্রিয়াজাত, তৈরি খাবার, ফাস্টফুডের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কোষাধ্যক্ষ ড. মো. মনজুর-ই খোদা তরফদার বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ খাদ্য নিয়ে সচেতন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আমরা কি খাই, হলের খাদ্য কতোটা নিরাপদ? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি। দেশে চারটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কি গবেষণা হচ্ছে? তিনি মনে করেন, স্কুলে পড়ুয়া একজন শিশুর মনের ভেতর এবং তার কমিউনিটির মধ্যে যদি নিরাপদ খাদ্য নিয়ে সচেতন করা যায় তাহলে সেই শিশু বড় হয়ে যেখানে চাকরি করবে, সেখানে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করবে। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি তার মাথায় থাকবে। শিক্ষা কারিকুলামে নিরাপদ খাদ্যের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলেও জানান তিনি।
বিসেইফ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মিটন বলেন, দেশের ১৮টি প্রতিষ্ঠান খাদ্যের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় নেই। এর জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ দরকার। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আমেরিকার এফডিএর আদলে বাংলাদেশেও কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে বলে তিনি অভিমত দেন। হোটেল-রেস্টুরেন্টে অপেশাদার ব্যক্তি দিয়ে পরিচালনা হয়ে আসছে। এই কর্মজীবী মানুষের প্রশিক্ষণের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন, বাচ্চাদের খাবারেও ফুডগ্রেড রং ব্যবহার না করে ফেব্রিকের রং ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে মানবদেহে ক্ষতিকর জীবাণুর সঙ্গে ক্যান্সার বাসা বাঁধছে। রেস্তোরাঁগুলোতে একই তেল দিয়ে বারবার খাবার ভাজা হচ্ছে। এ বিষয়ে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষও নির্বিকার। আমাদের উচিত- সেক্টর ধরে ধরে কাজ করা। বিশেষ করে খোলা তেল ব্যবহার বন্ধে এখনই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কারণ খোলা তেলে কোন ধরনের ভিটামিনও নেই। আমরা যখন অনিরাপদ খাদ্য খাচ্ছি সেখানে দক্ষ মানবসম্পদ না হয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
কাওসার রহমান বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিয়ে আমাদের দেশে দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে রুট লেভেল থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। স্কুলে ক্লাসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপদ খাদ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারেন। আমরা বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশে অবস্থান করছি। প্রশ্ন হলো- নিরাপদ খাদ্যের দিক দিয়ে আমরা অন্যান্য মধ্যম আয়ের দেশের কাছাকাছি আছি, নাকি পিছিয়ে আছি? বাণিজ্যের জন্যও খাদ্য নিরাপদ করা জরুরি।