ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

মৃত্যুবার্ষিকীতে শামসুর রাহমান স্মরণ

রচনাবলী প্রকাশ সম্পন্ন করার তাগিদ

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৮ আগস্ট ২০২১

রচনাবলী প্রকাশ সম্পন্ন করার তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টর ॥ দেশের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল মঙ্গলবার। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার পর থেকে অদ্ভুত এক শূন্যতা। যে কবিকে ঘিরে একসময় দারুণ সরব ছিল সাহিত্যাঙ্গন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামে, স্বৈরাচার বিরোধী লড়াই বা শহীদ মিনারের প্রতিবাদ সভায় যার উপস্থিতি ছিল অনিবার্য, সেই ‘রাহমান ভাই’ আজ স্মৃতি। তার শ্যামলীর বাসায় নবীন-প্রবীণ কবিদের যাতায়াত এখন প্রায় বন্ধ। তবে মৃত্যুর আগে অজস্র কবিতা তিনি পাঠকের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। প্রয়াণ দিবসে সেইসব কবিতায়, কথায়, স্মৃতিচারণে বারবারই ওঠে এসেছে প্রিয় কবির নাম। অনেকেই তাকে নিয়ে লিখেছেন। কবির কালজয়ী অনেক কবিতা মৃত্যু দিনে নতুন করে সামনে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শামসুর রাহমানের কবিতা ও ছবি পোস্ট করা হয়েছে। বিশেষ করে কবি ও বাচিক শিল্পীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন। কেউ আবৃত্তি করে কেউ প্রিয় কবিতার নির্বাচিত পঙ্ক্তি তুলে ধরে কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। করোনাকাল চলায় বিশেষ কোন আনুষ্ঠানিকতা বা সাংগঠনিক উদ্যোগ এদিন চোখে পড়েনি। তবে শামসুর রাহমানের সৃষ্টি বাঁচিয়ে রাখার ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। জানা যায়, বাংলা একাডেমি থেকে শামসুর রাহমান রচনাবলী প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেটি বেশ কয়েক বছর আগের কথা। দুটি খন্ড প্রকাশও করেছিল সরকারী প্রতিষ্ঠান। তবে এর পর লম্বা সময় পার হয়ে গেলেও, কাজটি আর এগোয়নি। শামসুর রাহমান বিপুল কবিতা রচনা করে গেছেন। সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ খন্ডে প্রকাশ করার মতো। সে জায়গায় মাত্র দুটি খন্ড প্রকাশ করে থেমে গেছে একাডেমি। মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় কবিতা পরিষদ। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কবি তারিক সুজাত জনকণ্ঠকে বলেন, এখন বেসরকারী অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অল্প সময়ের মধ্যে বড় বড় লেখক কবিদের রচনাবলী প্রকাশে সক্ষম। আমরা তা নিয়মিত দেখছিও। অথচ সরকারী প্রতিষ্ঠান শামসুর রাহমানের মতো কবির রচনাবলী করতে গিয়ে মাত্র দু খন্ডে আটকে আছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এদিকে, রচনাবলীর সম্পাদক আবুল হাসনাতও গত বছর প্রয়াত হয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তারিক সুজাত বলেন, আবুল হাসনাত রচনাবলীর দুইটি খন্ড অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদনা করে গেছেন। আমার জানা মতে, আরও একটি খন্ডের কাজ শেষ করে গেছেন তিনি। তৃতীয় খন্ডের কাজেও হাত দিয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে বড় ক্ষতি হলো আমাদের। তবে নতুন করে সম্পাদক বেছে নিয়ে বা বোর্ড গঠন করে কাজটি আবারও শুরু করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। অবশ্য বাংলা একাডেমিতে এখন নতুন মহাপরিচালক। কাজটি শুরু করেছিলেন শামসুজ্জামান খান। পরে আর কাজটি এগোয়নি। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সময়ও এ নিয়ে কোন কাজ করতে দেখা যায়নি। বর্তমানে দায়িত্বে আছেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। নতুন মহাপরিচালকের কাছে রচনাবলীর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন অন্য কবিরাও। তবে এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন কবি শামসুর রাহমান। এ রাজধানীতেই তার বেড়ে ওঠা। ঢাকার যাপিত জীবনকে তিনি বারবার তার কাব্যছন্দে তুলে ধরেছেন। সে সঙ্গে বাঙালীর সব আন্দোলন-সংগ্রামে তার কবিতা প্রেরণা জুগিয়েছে আপামর জনগণকে। ১৯৬০ সালে শামসুর রাহমানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয়। সবমিলিয়ে ৬০টিরও বেশি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে তার। কবির লেখা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’, ‘আসাদের শার্ট’, ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ কবিতা এখনও একই রকম আবেদন নিয়ে পঠিত হয়। কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে শিশুতোষ, অনুবাদ, ছোটগল্প, উপন্যাস, আত্মস্মৃতি, প্রবন্ধ-নিবন্ধের গ্রন্থ লিখেছেন শামসুর রাহমান। কাব্যচর্চার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় দীর্ঘ সময় কাটান তিনি। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে মর্নিং নিউজে সাংবাদিকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবন শুরু করেন। এরপর দৈনিক বাংলাসহ বহু জনপ্রিয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে কাজ করেন। কবিতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ শামসুর রাহমান স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রী দেয়া হয়।
×