নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ৪ এপ্রিল ॥ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে গত শনিবার হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা নারীর আসল পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা (২৭)। তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কুলধর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ অলিয়ার রহমান ওরফে পাগলা অলি মিয়ার মেয়ে। আট ভাই-বোনের মধ্যে ঝর্ণা দ্বিতীয়। তার বাবা অলিয়ার রহমান (৭০) ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সেনা সদস্য।
মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে রিসোর্টটিতে গেলে স্থানীয়রা তাকে ঘেরাও করেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। মামুনুল ঘটনার সময় ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার নাম আমেনা তৈয়্যবা বলে দাবি করলেও আলফাডাঙ্গার কুলধর গ্রামবাসী জানান, তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। তবে জান্নাত আরা ঝর্ণার আগে বিয়ে হয়েছে, সেই ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে, এ কথা সবাই জানলেও দ্বিতীয়বার বা মামুনুলের সঙ্গে বিয়ের কোন খবরই জানেন না তারা।
পরিবারের সদস্যরা জানান, জান্নাত আরা ঝর্ণার ১১ বছর বয়সে খুলনা জেলার হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয়। এ দম্পতির ঘরে আব্দুর রহমান ও তামীম নামে দুইজন ছেলে সন্তান আছে। পারিবারিক কলহে তিন বছর আগে জান্নাতের সঙ্গে শহীদুলের তালাক হয়ে যায়। তবে তাদের দুই সন্তান শহীদুল ইসলামের সঙ্গে থাকে।
তারা জানান, জান্নাত যশোরের ফকিরবাড়ি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। সেখানে তার দুলাভাই হাবিবুর রহমান এবং প্রাক্তন স্বামী শহীদুল ইসলাম শিক্ষকতা করতেন। সেই সুবাদে শহীদুল ইসলামের সঙ্গে জান্নাতের বিয়ে হয়। বিয়ের পর শহীদুল খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার সিদ্দিকিয়া মাদ্রাসায় যোগ দেন। তালাকের পর জান্নাত বাবার বাড়িতে চলে আসেন। এরপর জান্নাত ঢাকার ধানমন্ডিতে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। দুই বছর আগে ঝর্ণা নিজের দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানালেও মামুনুল হকের নাম কখনও বলেননি। গত দুই বছরে জান্নাত দুই তিনবার বাবার বাড়িতে এলেও মামুনুল হক কখনও আলফাডাঙ্গায় আসেননি।
জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা অলিয়ার রহমান বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে জামাতা শহীদুল ইসলামের পারিবারিক কলহে প্রায় তিন বছর আগে ডিভোর্স হয়ে যায়। তারপর থেকে দুই বছর আগে আমরা পাত্র দেখে মেয়েকে বিবাহ করার কথা বললে, মেয়ে বলতো আমার বিয়ে হয়েছে। এজন্য আমরা আর কোন পাত্র দেখিনি। তবে কার সঙ্গে মেয়ে ঝর্ণার দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে সে বিষয়ে পরিবার জানে না।
ঝর্ণার মা শিরীনা বেগম বলেন, ‘শুধু একবার ভিডিও কলের মাধ্যমে স্বামীকে দেখিয়েছিল। কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি যে, তিনি মামুনুল হক ছিলেন।’
গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ মোনায়েম খান বলেন, ‘জান্নাত আরার বাবা অলিয়ার রহমান একজন সহজ-সরল মানুষ। মেয়েটির আগে বিয়ে হয়েছিল। সে ঘরে দুটি ছেলে সন্তান আছে। পরের বিয়ের বিষয়টি আমরা জানি না।’