ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উল্টো চিত্র ভারতে

বাংলাদেশে বিলুপ্ত ভারতীয় ছিটে উন্নয়নের ছোঁয়া

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ২ ডিসেম্বর ২০১৯

 বাংলাদেশে বিলুপ্ত ভারতীয় ছিটে উন্নয়নের ছোঁয়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১ ডিসেম্বর ॥ বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের মূলধারায় ফিরে এসেছে। উল্টো চিত্র ভারতে। ভারতের ভেতরে থাকা ৫১টি বাংলাদেশের ছিটমহলে তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের বিলুপ্ত ছিটমহল থেতে ভারতে গেছেন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় তারা বাংলাদেশে ফিরে আসার আবেদন করেছেন। ভারতীয় পত্রপত্রিকায় গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে। জানা গেছে, মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েছে সাবেক ছিটের একটি পরিবার। একই আবেদন নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ভারতীয় প্রশাসনের ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া পরিবারটিকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় পত্রপত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান হলদিবাড়ি কৃষি ফার্মের অস্থায়ী শিবিরের সাবেক ছিটের বাসিন্দা কমলেশ সরকার জানান, তিনি সাবেক ছিট ২ নম্বর কোট ভাজনীর বাসিন্দা ছিলেন। ২০১১ সালের জনগণনার সময় তার বংশধরদের তিনটি পরিবার হিসেবে দেখানো হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ভারতে আসার জন্য নাম নথিভুক্ত করা হয়। সে সময় তাদের চার পরিবার ভারতে আসার জন্য নাম নথিভুক্ত করেন। কিন্তু পরে একটি পরিবার ভারতের মূল ভূখণ্ডে না আসার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী শেষ দিন ২০ জুলাই চার সদস্যর সেই পরিবারটি ভারতে যাননি। ফলে পরিবারটির নাম কেটে দেয়া হয়। কিন্তু অন্য তিনটি পরিবারের নাম নথিভুক্ত থাকায় তারা ভারতে চলে যায়। ২০১৫ সালের ২২ নবেম্বর ডাঙ্গাপাড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন তারা। কমলেশ বাবুর অভিযোগ, মূল ভূখণ্ডে প্রবেশের পর তিনি জানতে পারেন তার বংশধরদের একত্রে একটি পরিবার দেখানো হয়েছে। অথচ তারা ৩ পরিবার ভারতে গিয়েছে। এখন যে কোন ভারতীয় সরকারী সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের একটি পরিবার হিসেবে গণ্য করা হবে। এদিকে, আসলে তার বংশধররা মোট চারটি পরিবারে বিভক্ত। এই সমস্যার জন্য তার এক ভাই নিত্যানন্দ সরকারের পরিবার মূল ভূখণ্ডে না এসে সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা সাবেক ছিটেই ফিরে আসে। এদিকে জানা গেছে, কমলেশ বাবুর স্ত্রী অনীতা রানি সরকার জন্মসূত্রে ছিলেন বাংলাদেশী। বাড়ি ছিল বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার বলরামপুর গ্রামে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরকারী নার্স হিসেবে চাকরি করতেন। একটু বেশি সুখ শান্তির আশায় সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বামীর সঙ্গে ভারতে চলে আসেন। অনীতা দেবীকে ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারতের মূল ভূখণ্ডে ফিরে এলে তাকে সরকারী চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখানে যাওয়ার চার বছর অতিক্রান্ত হলেও চাকরি পায়নি। পায়নি মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে স্থায়ী পুনর্বাসনের ফ্ল্যাট। নিদারুল কষ্টে ভারতে তাদের দিন কাটছে। বিপদে পড়েছে স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে। পরিবারটি ভারতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েছে। আলাদা পরিবার হিসেবে তারা ভারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু চার বছর পর নাম নথিভুক্ত করেও কী করে ৩টি পরিবারকে একই পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখানো হলো প্রশ্ন তোলেন কমলেশ বাবু। বর্তমানে তাদের তিনটি পরিবারের মোট ১৩ সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে। সবাই অস্থায়ী শিবিরের মতো স্থায়ী শিবিরেও তাদের জন্য মাত্র দুটি ফ্ল্যাট বণ্টন করা হয়েছে। অস্থায়ী শিবিরে তাদের একটি পরিবার বাধ্য হয়ে গোয়াল ঘরে থাকছেন। স্থায়ী শিবিরে তাদের ঠাঁই হয়নি। কীভাবে স্থায়ী শিবিরে ফ্ল্যাট পাবেন সেই নিয়ে চিন্তায় রয়েছে পরিবারটি। ভারতীয় জনৈক সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমলেশ সরকার তার ৩ পরিবারের জন্য স্থায়ী শিবিরে তিনটি ফ্ল্যাট দাবি করেছেন। দাবি করেছেন স্ত্রীর কর্মসংস্থানের। এই দাবিতে তিনি মেখলিগঞ্জের মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন। এর আগে কোচবিহারের জেলাশাসক ও হলদিবাড়ির বিডিওর কাছে একই দাবিতে লিখিত দাবিপত্র দিয়েছেন। তাতে কাজ না হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কমলেশের পরিবার। এই বিষয়ে ২৯ নবেম্বর শুক্রবার ভারতে থাকা বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দ্বারস্থ হয়ে ছিলেন বলে একটি সূত্র দাবি করেন। সূত্রটি দাবি করেন, মেখলিগঞ্জের এসডিও রামকুমার তামাং বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে পত্র দিয়েছেন। সূত্রটি মনে করে, বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহল থেকে যেসব পরিবার অতিরিক্ত সদস্য নিয়ে ভারতে এসেছে তাদের অতিরিক্ত ফ্ল্যাট বাড়ি প্রদানের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা উচিত। এদিকে ২৬ নবেম্বর বুধবার বিভিন্ন দাবিতে কোচবিহার জেলা শাসকের দফতরে জমায়েত হয়ে ছিল ভারতের সাবেক ছিটমহলবাসীরা। তারা বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে বুধবার কোচবিহারের জেলা শাসক পবন কাদিয়ানের দফতরে জমায়েত হলে ছিল ভারতের ভেতরে থাকা সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা।
×