বিশেষ প্রতিনিধি ॥ “...হাজার বছর ধরে নিরন্তর প্রতীক্ষার পর শোনা যায় সেই কণ্ঠস্বর। বজ্রকণ্ঠ। বীজমন্ত্র। নক্ষত্রমানব। মন্ত্রবীজ তর্জনীরেখায়। ভেঙ্গে যায় বরফের ঘুম। ভাঙে প্রাচীন শৃঙ্খল। ছুটে আসে সমুদ্রগর্জন। আছাড়িপিছাড়ি ঢেউ মাথা ঠোকে বোধের জমিনে। হাজার আগ্নেয়গিরি ফুঁসে ওঠে সহস্র শিখায়। শিখা চিরন্তন। স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল, দাবানল থেকে বাংলাদেশ।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বর্জ্রনির্ঘোষ ভাষণ নিয়ে কবি আবু হাসান শাহরিয়ার তার ‘নক্ষত্রমানব’ কবিতায় এমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর হিমালয়সম উচ্চতা তুলে ধরেছেন নিখুঁতভাবে। বাঙালী জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস আগস্টের আজ পঞ্চম দিন। সর্বত্রই শোকের আবহ। নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি স্মরণ করছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, স্বাধীন পতাকা। পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার দীর্ঘ ২১৪ বছর পর ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। দাতত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বাঙালী জাতি যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন লাল-সবুজের রক্তস্নাত স্বাধীন পতাকা।
কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘাতকরা চেয়েছিল ইতিহাসের চাকাকে পেছনে ঘোরাতে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল পাস করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে পারেনি। বরং তারাই নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনীরা আস্ফালন করে বলেছিল, পৃথিবীতে তাদের বিচার করার কারও সাধ্য নেই। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘাতকদের বাংলার মাটিতে বিচারে ফাঁসি হয়েছে। ফাঁসির রায়ও কার্যকরের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
বছর ঘুরে বাঙালীর সামনে আবার এসেছে শোকাবহ আগস্ট। শোকের নানা অনুষ্ঠানে কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধানবতচিত্তে স্মরণ করছেন সেই বাংলাদেশ নামক দেশের স্বাপ্নিক স্থপতি হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পুরো শোকের মাস বুকে কালোব্যাজ ধারণ করে, কালো পতাকা উত্তোলন এবং নানা অনুষ্ঠানে তীব্র ঘৃণা ও ধিক্কার জানাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর খুনী নরপিশাচ একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের।
দিন যতই এগুচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীসহ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের মদদদাতাদেরও বিচারের দাবি ততই তীব্র হচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে সাঁটানো পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুনেও শোভা পাচ্ছে এই একই দাবি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শহর-নগর-বন্দরে কালো ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে, নানা অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে জাতির জনককে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: