ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাভারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বিজিবি কর্মকর্তার মারধর ॥ প্রশাসনে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

 সাভারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বিজিবি কর্মকর্তার মারধর ॥ প্রশাসনে  তোলপাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাভার, ১৩ জানুয়ারি ॥ সাভারে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন করতে এসে বিরোধে জড়িয়ে পড়লেন এক বিজিবি কর্মকর্তা ও এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিজিবির ওই মেজরকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করায় এবং ‘ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি ছাড়া গুলিবর্ষণ করতে নিষেধ করায়’ তার হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন দায়িত্বরত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। রবিবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার মডেল থানাধীন উলাইল বাসস্ট্যান্ডের ‘আল-মুসলিম’ নামক পোশাক কারখানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিবির মেজরের হাতে শারীরিকভাবে মারধরের শিকার ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাজিবুল ইসলাম ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, চলমান শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় আল-মুসলিম কারখানায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য অবস্থান করছিল বিজিবি, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একটি দল। ওই দলে বিজিবির নেতৃত্বে ছিলেন ৫ বিজিবি সেক্টর সদর দফতরের মেজর এএফএম রহমত উল্লাহ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাজিবুল ইসলাম। দায়িত্ব পালনের এক পর্যায়ে মেজর এএফএম রহমত উল্লাহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল ইসলামকে নিয়ে আল-মুসলিম গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মেজর (অব.) খন্দকার হেলাল হোসেনের অফিস কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে আলাপচারিতার একপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রাজিবুল ইসলাম বিজিবি মেজর রহমাতুল্লাহকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করায় তিনি ক্ষিপ্ত হন। ঘটনার কিছুক্ষণ পর আশুলিয়া থেকে সংবাদ আসে ওই অঞ্চলের কারখানার বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। এ সময় মেজর এএফএম রহমতুল্লাহ তার দু’জন সিপাইকে ডেকে আশুলিয়ার একটি স্থানে যেতে বলেন এবং তাদের নির্দেশ দেন যে ‘সেখানে যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তাহলে সরাসরি ফায়ার ওপেন করবে এবং পরে ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাবে।’ এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল ইসলাম আইনের বিধি উল্লেখ করে বিজিবি মেজর রহমত উল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘গুলি করার অনুমতি আপনি দিতে পারেন না। গুলি করার পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ম্যাজিস্ট্রেট পরিস্থিতি বিবেচনা করে গুলির অনুমতি দিতে পারেন।’ এ কথা শুনেই মেজর রহমত উল্লাহ উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল ইসলামকে ‘তুই-তুমি’ বলে সম্বোধন করেন। পরে তার শার্টের কলার ধরে রুমের বাইরে নেয়ার চেষ্টা করেন এবং উপর্যুপরি কিল-ঘুষি ও বুট দিয়ে লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মারধরে তার ডানচোখের উপরে কেটে যায় এবং মুখমন্ডল ফুলে যায়। অনাকাঙ্খিত এ ঘটনায় সেখানে উপস্থিত সকলেই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। বিজিবি কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রহারের সংবাদ পেয়ে অপর এক নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আমজাদুল হক বলেন, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আঘাত তেমন গুরুতর নয়। আল-মুসলিম গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মেজর (অবঃ) খন্দকার হেলাল হোসেন বলেন, তার কক্ষে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সত্যিই দুঃখজনক। সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সওগাতুল আলম জানান, ঘটনা শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি।
×