সমুদ্র হক, বগুড়া ॥ তীর খুঁজে পেল সুবিধা বঞ্চিত অনাথ শিশু মারুফা। সে থাকত বগুড়া সরকারী শিশু পরিবারে। এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর যতটা ছিল আনন্দ ততটাই ছিল বিমর্ষ। সে কি পারবে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে! বয়স ১৮ বছর হওয়ার পর তো শিশু পরিবারে আর রাখবে না। সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম খানের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি ডেকে পাঠালেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মারুফাসহ শিশু পরিবারের যতজন উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতকার্য হয়েছে তাদের।
রবিবার বিকেলে জেলা প্রশাসন অফিসে এক আনন্দঘন পরিবেশে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী তাদের বরণ করে নিলেন রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে। রজনীগন্ধা যেমন রাতে নীরবে গন্ধ বিলিয়ে দেয়, সুবিধা বঞ্চিত এই শিশুরাও তেমনই। এদের জীবনের মিষ্টি গন্ধ ক’জনাই পায়। জেলা প্রশাসক মারুফা খাতুনের উচ্চতর শিক্ষার যাবতীয় খরচের জন্য বড় অঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যবস্থা করলেন।
এই তহবিলের মুনাফা থেকে প্রতি মাসে লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ চালাতে পারবে সে। মারুফা খাতুন জেলা প্রশাসকের এই সহযোগিতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলল, উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চাকরি নেব। তার বিজয়ে মায়ের মমত্ববোধ দিয়ে তাকে মিষ্টি মুখ করান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হানা ইসলাম। বগুড়া শিশু পরিবার থেকে এ বছর যতজন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল শতভাগ উত্তীর্ণের সঙ্গে তাদের সকলেই ভাল ফলাফল করেছে। প্রত্যেককেই বরণ করে নেন জেলা প্রশাসক।
মারুফা খাতুন ২০০৬ সালে বগুড়া শিশু পরিবারের সদস্য হয়। বাস কন্ডাক্টর বাবা মাসুদ প্রামাণিক গত হয়েছেন মারুফার শিশু বেলায়। তারা ২ বোন এক ভাই। আরেক বোন সুমা খাতুন শিশু পরিবারে থাকে। সে মাধ্যমিকে জিপিএ-৪ দশমিক ৮ পেয়েছে। ভাই লেখাপড়া করে না। মা পারভীন বেগম বিসিকের একটি কারখানায় কাজ করে।
মাদারীপুরে কাকলীর পাশে এমপি
নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, বদলে যাচ্ছে অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী অসহায় কাকলী আক্তারের ভাগ্য। চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় শিবচর উপজেলার মধ্যে একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান কাকলীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়তে ও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পাশে দাঁড়িয়েছেন শিবচরের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, র্যাবসহ দানশীল ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠন। ইতোমধ্যে এমপি নূর-ই-আলম চৌধুরীর বোন নিপা চৌধুরীর শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে শিক্ষার যাবতীয় খরচ বহন করার ঘোষণা দিয়েছে। পাশাপাশি এমপি নূর-ই আলম চৌধুরী কাকলীর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে শিক্ষা অনুদান ছাড়াও কাকলীর বাড়ি-ঘর সংস্কার, সৌরবিদ্যুত স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনকে। সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরীর ছোটবোন নিপা চৌধুরী পরিচালিত তারেক হায়দার ট্রাস্ট ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা বৃত্তির। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনও বৃত্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করে কাকলীর উচ্চ শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়াও মাদারীপুর জেলা পরিষদ ৫ হাজার টাকা ও শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে। এরই মধ্যে সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী তার নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য ও গৃহ নির্মাণের জন্য টিন প্রদান করেন এবং সোলার লাইট ও ফ্যান প্রদানের ব্যবস্থা করেন। র্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। র্যাব-৮ মাদারীপুর ক্যাম্প অধিনায়ক ক্যাপ্টেন মোঃ খালেদ মাহমুদ ফুলের তোড়া, নগদ ১০ হাজার টাকা, মিষ্টি ও নতুন পোশাক তুলে দেন কাকলীর হাতে। এ ছাড়াও কাকলী ও কলেজের অধ্যক্ষের মোবাইলে দেশ বিদেশের অসংখ্য হৃদয়বান ব্যক্তি সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছেন। উলেল্লখ্য, চলতি বছর এইচএসসির ফলাফলে জেলার শিবচর উপজেলার ৫টি কলেজের মধ্যে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ ৮৮.৫৯ ভাগ উত্তীর্ণ হয়ে শীর্ষ স্থান দখল করে। উপজেলার মধ্যে একমাত্র জিপিএ-৫ অর্জনধারী এই কলেজের মানবিক বিভাগের মেধাবী ছাত্রী কাকলী আক্তার। দফায় দফায় পদ্মা নদী ভাঙ্গন আক্রান্ত কাকলীর নিঃস্ব পরিবারটি উপজেলার পাচ্চরে এক চালার একটি খুপড়ি ঘরে বসবাস। ৫ ভাই বোনের সংসারে বাবা হারুন মাদবর দিনমজুর আর মা তাসলিমা বেগম সংসারী।
অন্যের জমিতে বাবা দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান। ছোট সময় থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী কাকলী এসএসসিতে পাচ্চর বালিকা বিদ্যালয় থেকে জীবন সংগ্রাম করে জিপিএ-৫ অর্জন করে। পরে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় ভর্তি ফি ছাড়াই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী কলেজ কর্তৃপক্ষ কাকলীকে পড়ার সুযোগ করে দেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: