ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে গ্রাহকরা হতাশ

এসডিএস-আইটিসিএলের সম্পত্তি বিক্রির পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

এসডিএস-আইটিসিএলের সম্পত্তি বিক্রির পাঁয়তারা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৩০ ডিসেম্বর ॥ ইসলামিক ট্রেড এ্যান্ড কমার্স লিমিটেড (আইটিসিএল) এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) বাংলাদেশের শত শত গ্রাহককে না জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির অগোচরে সুকৌশলে প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে খোলা বায়নাপত্র দলিল সম্পাদন করে ৪০ একর সম্পত্তি ২০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এতে শত শত গ্রাহকের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৯০ দশকের শুরুতে ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার তিন বন্ধু নুরুল ইসলাম, সেলিম আল দীন ও আব্দুর রহিম মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। টাঙ্গাইল সমাজ সেবা বিভাগ থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শুরু হওয়া ওই সংগঠন টাঙ্গাইল শহর ও আশপাশের এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করে। এসডিএসের প্রসার ঘটার পর ১৯৯৬ সালে তারা এর অঙ্গসংগঠন হিসেবে আইটিসিএল প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। খুব অল্প সময়ে শুধু টাঙ্গাইল নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এর কার্যক্রম। আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমও শুরু করে। আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করার পর ঢাকার গুলশানে তারা অফিস নেন। একই সঙ্গে সদর উপজেলার চারাবাড়ি এলাকায় দুই শতাধিক একর জমির ওপর কৃষি খামার গড়ে তোলে এসডিএস। ২০০২ সালে আইটিসিএলের আমানত সংগ্রহকে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গ্রাহকরা টাকা তোলার জন্য ভিড় করেন আইটিসিএলের বিভিন্ন কার্যালয়ে। বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা জমানো টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ মিছিল, কার্যালয় ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচী পালন করে। গ্রাহকদের চাপের মুখে এক পর্যায়ে আইটিসিএল-এসডিএসের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কর্মকর্তারা সবাই গা ঢাকা দেন। দেশের বিভিন্নস্থানে আইটিসিএল কর্তৃপক্ষের নামে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা মামলা দায়ের করেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ও তার তিন বন্ধুর নামে সারাদেশে প্রায় তিন শ’ মামলা দায়ের করে গ্রাহকরা। ২০০২ সালের ১৫জুন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক করতে এলে পুলিশ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে গ্রেফতার করে। প্রায় সাড়ে আট বছর জেলহাজতে থাকার পর ২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি ইসমাইল হোসেন সিরাজী জামিন লাভ করেন। তিনি আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আইটিসিএল-এসডিএসের নামে থাকা সকল সম্পত্তি বিক্রি করে জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত তহবিলে জমা রাখবেন এবং সেখান থেকে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করবেন। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের মনোনীত ব্যক্তি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জিপি, পিপি, প্রেসক্লাবের সভাপতি ও গ্রাহক কমিটির সভাপতি সমন্বয়ে প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ইসমাইল হোসেন সিরাজী জামিন পেয়ে আর টাঙ্গাইল আসেননি। আত্মগোপন অবস্থা থেকেই তার ভায়রা নুরুল ইসলামের সহায়তায় গোপনে কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দেবেন- এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসমাইল হোসেন সিরাজী জামিনে মুক্তি লাভ করলেও সাত বছরেও কোন গ্রাহকের টাকা তিনি ফেরত দেননি। গ্রাহকদের করা একাধিক প্রতারণা মামলায় তার অনুপস্থিতিতেই সাজা হয়েছে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মামলা থেকে রেহাই পেতে ইসমাইল হোসেন সিরাজী বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে (৬৮) ধানম-ি এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার স্ত্রী রুবাইয়া গুলশান-ধানম-ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। অপহরণ নয়, মূলত আত্মগোপন করেন সিরাজী। সিরাজী আত্মগোপন করে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়ায় তার শশুরবাড়ি ওঠেন। শশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত ১৬ মে গভীর রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের নগরজলফৈ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গত ১৭ মে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গত ২৯ আগস্ট আদালতে ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, জনগণ তার কাছে কোন টাকা পায় না, এসডিএস-আইটিসিএলের সব সম্পত্তি তার পৈত্রিক। এ বক্তব্যের পর আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও হই-হুল্লোড় শুরু হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করে, ওই ঘটনার পর জেলহাজতে থেকেও ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার ভায়রা নুরুল ইসলাম, বন্ধু সেলিম আল দীন ও আব্দুর রহিম মিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার সম্পত্তি খোলা বায়না দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করছেন। এরই মধ্যে তার ভায়রা নুরুল ইসলাম টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী মৌজায় ৭৪১ শতাংশ ও গদুরগাতী মৌজায় ১৯৮ শতাংশ জমি (আলাদা আলাদা দাগে) বিক্রির পাঁয়তারা চলছে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অতুল ম-ল জানান, এসডিএস-আইটিসিএলের সকল সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের জন্য আদালতের নির্দেশনায় সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে জমি বিক্রির কোন সুযোগ নেই।
×