ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্তন ক্যান্সার বছরে আক্রান্ত ১৫ হাজারের ৭ হাজারই মারা যায়

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

স্তন ক্যান্সার বছরে আক্রান্ত ১৫ হাজারের ৭ হাজারই মারা যায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমানে স্তন ক্যান্সার নারীদের কাছে একটি আতঙ্কের নাম। বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুন করে ১৫ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে ৭ হাজারই মৃত্যুবরণ করেন। পুরুষের চেয়ে নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে একশ’ ভাগ বেশি। আর নারীরা তাদের নিজেদের এই গোপন অঙ্গের রোগগুলো সহজে কারও কাছে বলতে চান না। ফলে তারা স্তন ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেক সময় চিকিৎসা করানোর আগেই রোগটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। রবিবার ‘ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ, নিরাময় ও চিকিৎসার বিষয়ে’ সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ আয়োজিত সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ইনস্টিটিউশনের সভাপতি কৃষিবিদ এম এম এম সালেহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউশন ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মহাসচিব কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল আলম (প্রিন্স) প্রমুখ। ডাঃ মোঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, স্তন ক্যান্সারের আক্রান্ত নারীকে নানা প্রতিকূল বাস্তবতার শিকার হতে হয়। সমাজের ধনী-গরিব শিক্ষিত ও অশিক্ষিত অনেক পরিবারেই স্তন ক্যান্সারের কারণে ডিভোর্সের উদাহরণ রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে এবং ডিভোর্সপ্রাপ্ত নারীকে অনেক সময় বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয়। এরপর চিকিৎসার ব্যয় মেটাতেও অনেককে হিমশিম খেতে হয়। অনেকের পক্ষে সম্ভবও হয় না। তিনি বলেন, স্তন ক্যান্সার নিয়ে নারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও সচেতনতা বেড়েছে। তবে চিকিৎসা সুবিধা এখনও অপ্রতুল। যেভাবে এ বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ার প্রয়োজন ছিল সেভাবে হয়নি। ডাঃ মোঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন আরও বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে যেসব মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। এ বিষয়ে নারীদের সচেতন হতে হবে। কারণ একজন সুস্থ মা একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ নারীরা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। এ ছাড়া তারা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। সচেতনতার অভাব আর অজ্ঞতার জন্য এই রোগ প্রতিনিয়ত বিস্তার লাভ করছে। আমাদের দেশে ৪০ বছরের পর নারীদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। তবে যে কোন সমস্যায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সেমিনারে অন্য বক্তারা বলেন, বিভিন্ন কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। অনেক নারী আছেন যারা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান না। এতে করে একদিকে সন্তান অপুষ্টিতে ভোগে আরেক দিকে মায়ের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই অবশ্যই সন্তানকে দেড় থেকে দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বেশির ভাগ নারীদের ৫০ বছরের পর মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। ৫০ বছর বয়সের পর নারীদের যদি মাসিক বন্ধ হয়ে রক্তক্ষরণ হয়, তবে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। লাল ও চর্বিযুক্ত মাংস স্তন ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়ায়। তাই লাল ও চর্বিযুক্ত মাংস পরিত্যাগ করতে হবে। অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া নারীর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। যেসব নারী ৩০ বছরের অধিক পরে বিয়ে করেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। ৩০ বছরের মধ্যে যারা বিয়ে করেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম। অনিয়মিত, দীর্ঘস্থায়ী বা নির্দিষ্ট সময়ের আগে মাসিক হলে তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া অনেক কিশোরী আছেন যাদের ১৩-১৪ বছরের মধ্যে মাসিক হওয়ার কথা থাকলেও দেখা যায় ১০ বছরেই মাসিক হয়ে যায়, তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। বংশগত কারণে নারীদের স্তন ক্যান্সার হয়। মায়ের যদি স্তন ক্যান্সার হয়, তবে মেয়েরও হতে পারে।
×