স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে অপসারণের পর এ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করায় মর্মাহত হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী সরকারকে বাস্তবতা বোঝার পরামর্শ দিয়েছেন। হেফাজত নেতা এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেবীর ‘মূর্তি’ এ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করার ঘটনা হতাশাজনক। এদিকে জাতিকে বিভক্ত করার অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করছেন শোলাকিয়া ঈদগার ঈমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী বিবৃতিতে বলেছেন, গত ২৫ মে মধ্যরাতে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রীক দেবীর মূর্তি অপসারণের মাত্র দুই দিনের মাথায় রাতে সুপ্রীমকোর্ট এ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হতাশাজনক। এই ঘটনায় তিনি মর্মাহত, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক জেতনার পরিপন্থী এই বিদেশী ভাস্কর্যকে বাংলাদেশের কোথাও স্থান দেয়া যাবে না। শাহ আহমদ শফী বলেন, থেমিস দেবীর ভাস্কর্য অপসারিত হয়েছে জেনে অসুস্থ শরীরেও আনন্দ পেয়েছিলাম। দেশবাসীর সঙ্গে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছিলাম। কিন্তু মাত্র দু’দিনের মাথায় যখন দেশবাসী পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল, প্রথম রোজার তারাবিহ আদায় করে প্রশান্ত চিত্তে ঘরে ফিরেছিল, তখনই এমন সংবাদে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত হতবাক এবং বাকরুদ্ধ।
বিবৃতিতে আহমদ শফী মুক্তিযুদ্ধের চেতার কথাও সামনে এনেছেন। বলেছেন, আমরা বার বার বলেছি ইসলামে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণা একটি মৌলিক ধারণা বা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এমনকি ইনসাফ কায়েম ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্য। সেই ন্যায়ের বা ইনসাফের কোন প্রতীকায়ন যদি গ্রীক ঐতিহ্য থেকে ধার করা হয়, তবে প্রকারান্তে এটাই ধরে নেয়া হয় যে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও ধর্মে ন্যায়ের কোন ধারণা বা অবস্থান ছিল না। এটা উপনিবেশিক ভাবাদর্শ। আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, গ্রীক দেবী থেমিসের এই প্রতীককে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে। আমাদের সব আবেদন নিবেদন এবং শান্তিপূর্ণ দীর্ঘ আন্দোলনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে থেমিসের পুনর্স্থাপন এটাই প্রমাণ করে, এদেশের মানুষের সম্মিলিত আকাঙ্খাকে সরকার বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না।
এতদিন ঈদের জামাতের কথা তুলে ভাস্কর্য অপসারণের কথা বললেও বিবৃতিতে হেফাজত নেতা দাবি করেছেন, থেমিস সুপ্রীমকোর্টের সামনে থাকবে, নাকি পেছনে থাকবে এটা কোন ইস্যু কখনও ছিল না। নামাজের সময় কালো কাপড়ে মুড়ে দেয়া হবে কি হবে না এটাও ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল, থেমিস থাকবে কি থাকবে না। এইখানে মধ্যপন্থা নেয়ার কোনও সুযোগ নাই।
হেফাজত আমির প্রগতিশীল মিডিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমরা আমাদের ঈমান ও আক্বিদার জমিনে দাঁড়িয়ে এই ঔপনিবেশিক ভাবাদর্শের বিরুদ্ধেই বলেছি। অথচ সেক্যুলার মিডিয়া আমাদের যুক্তি বার বার উপেক্ষা করেছে। আমাদের এই যুক্তির কথা তাদের বার বার জানানো হলেও তারা তা ছাপায় না। আমরা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলাম যে, ঠিক কোন যুক্তিতে নিজেদের আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবি করা বাম সেক্যুলারেরা থেমিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন?
এদিকে জাতিকে বিভক্ত করার অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করছেন শোলাকিয়া ঈদগার ঈমাম ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, একজন প্রধান বিচারপতি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। ভাস্কর্য বনাম মূর্তি নিয়ে তার আচরণে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন বলে অনুমেয়। এতে জাতি হতাশ। কাজেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তিনি (প্রধান বিচারপতি) পদত্যাগ করে জাতিকে মুক্তি দেবেন বলে আশা করি।
এদিকে অপর এক বিবৃতিতে ম্যানচেস্টার ও মিসরে সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। তিনি বলেন, নিরাপরাধ সাধারণ মানুষদের হত্যা করা একটি অমানবিক ও ঘৃণ্য কাজ। ইসলামকে ছোট করতে এবং মুসলিম সমাজকে হেয় করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যেই এসব হামলা চালানো হচ্ছে। অন্য যে কোন ধর্মের প্রতি ইসলাম সহনশীল, সহিষ্ণু। মুসলমান অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করতে পারে না। ম্যানচেস্টার এবং মিসরে কপটিক খ্রিস্টানদের চার্চে আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যমূলত ইসলামকেই ছোট করা। অন্যায় হামলাকারী-সন্ত্রাসী-জঙ্গী কখনই ইসলামের অনুসারী হতে পারে না।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: