স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঙ্গীতের কাছের সমর্পিত এক মানুষ কুটি মনসুর। একই সঙ্গে গান লিখেছেন, গেয়েছেন ও সুর করেছেন। তার লেখা ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম নারে জরিনা’ কিংবা ‘আইলাম আর গেলাম’ গানের সুরে মুগ্ধ প্রান্তিক থেকে শহুরে শ্রোতারা। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকের আধুনিক সঙ্গীতের অতি পরিচিত এই সঙ্গীতজ্ঞ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন মঙ্গলবার। এদিন রাত সাড়ে সাতটার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। রেখে গেছেন চার মেয়ে ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী। স্ত্রী মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। তার মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। কুটি মনসুরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়াও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষে শোক জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
কুটি মনসুরের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার বড় ছেলে খান মোহাম্মদ মজনু। তিনি জানান, গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার রামপুরার বনশ্রীর বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কুটি মনসুর। এরপর তাকে ঢাকার একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ২৯ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর মৃত্যুবরণ করেন কুটিন মনসুর। মোহাম্মদ মজনু আরও জানান, আজ বুধবার ঢাকার দোহারে কুটি মনসুরের বাড়িতে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।
সত্তর-আশি দশকের আধুনিক গানের পরিচিত নাম কুটি মনসুর। মঙ্গলবারও সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। লোকজগানের জগতে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি কুটি মনসুর ১৯২৬ সালে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানার লোহারটেক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৬০ বছরের সঙ্গীতজীবনে পল্লীগীতি, আধুনিক, জারি-সারি, পালাগান, পুঁথিপাঠ, ভাটিয়ালি, মুর্শিদী, মারফতি, আধ্যাত্মিক, দেহতত্ত্ব, হামদ-নাত, ইসলামি প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় আট হাজার গান লিখেছেন বলে জানান খান. মোহাম্মদ মজনু। এর মধ্যে ‘আইলাম আর গেলাম’, ‘যৌবন জোয়ার একবার আসে রে’, ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম না রে জরিনা’, ‘কে বলে মানুষ মরে’, ‘হিংসা আর নিন্দা ছাড়ো’, ‘সাদা কাপড় পরলে কিন্তু মনটা সাদা হয় না’সহ বেশ কিছু গান দারুণ শ্রোতাপ্রিয় হয়। তার কথা ও সুরে গান গেয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত কণ্ঠশিল্পীরা। তাদের মধ্যে আছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, নীনা হামিদ, রথীন্দ্রনাথ রায়, ফকির আলমগীর, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ফিরোজ সাঁই, মুজিব পরদেশীসহ অনেকেই।
অসুস্থ হওয়ার মাস দুয়েক আগে বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয় কুটি মনসুর রচিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু, আমার একাত্তর’ শিরোনামের গ্রন্থ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: