ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘সালিশ মানি, তালগাছটা আমার’

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬

‘সালিশ মানি, তালগাছটা আমার’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির সংলাপ কতটা সফল হবে- সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের মনোভাব পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সালিশ মানি, তালগাছটা আমার’- এই যদি বিএনপির নীতি হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিএনপির সংলাপ সফল হবে না। বিএনপিকে বাস্তবসম্মত মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বিএনপির শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। তারা সংলাপের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে গেছেন। তবে বিএনপি যদি গণভবনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের ডাকে সাড়া দিত তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস হয়ত ভিন্নভাবে লেখা হতে পারত। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ায় রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান যখন সংলাপে ডেকেছিলেন, তখনও বিএনপি অংশ নিয়েছিল, কিন্তু তখনও তাদের মনমত হয়নি। এবারও বিএনপি যদি মনে করে, সালিশ মানি কিন্তু তালগাছটা আমার তাহলে সংলাপ সফল হবে না। তাদের বাস্তবসম্মত মনোভাব নিয়ে আলোচনায় যেতে হবে। এ ব্যাপারে বিএনপির বাস্তবসম্মত মনোভাব থাকতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের অভিভাবক। তিনি অনেক উদার প্রকৃতির মানুষ। অভিভাবক হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। তবে রাষ্ট্রপতি যতই দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু বিএনপির নীতি যদি হয় উল্টো, তাহলে তো সংলাপ সফল হবে না। তিনি বলেন, বিএনপি এখন কি চায়, তা তারা নিজেরাও জানে না। বিএনপি কি গণতন্ত্র চায়? তারা যখন বিরোধী দলে ছিল তখন জাতীয় সংসদ অধিবেশন ১৬৯ দিন সক্রিয় থাকলেও বিএনপি এসেছিল ৪৫ দিন। আর খালেদা জিয়া এসেছিলেন মাত্র ৫ দিন। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা এই দেশটাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষই আমাদের ক্ষমতায় উৎস। ভারতে কে ক্ষমতায় আসল, তারা আমাদের বসিয়ে দেবেন-এই রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না। আমেরিকার কে প্রেসিডেন্ট হবেন, তিনি এলে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন-এই রাজনীতিতেও আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ। একমাত্র জনগণই আমাদের ক্ষমতায় বসাতে পারে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার রাজনীতি করে তারা মনে করে কেউ এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে! কখনও এখানকার (দেশের) কেউ, কিংবা কখনও আটলান্টিকের ওপার থেকে। এই মানসিকতা হলে বিএনপির জনসমর্থনের পাল্লা ক্রমেই দুর্বল ও সংকুচিত হবে। মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে গণমানুষের ব্যাপক ঢল নামার বিষয়টি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি এত বিপুল সংখ্যক তরুণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ রাজপথে নামবে। এরাই আমাদের শক্তি। আমরা এই শক্তি দিয়েই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় সম্পূর্ণভাবে ফিরে আসতে শুরু করেছি। দেশের জনগণকে আর চিরাচরিত পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা এই বাংলাদেশে সফল হবে না। বক্তব্য প্রদানকালে ওবায়দুল কাদের তাঁর আগের বক্তাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আপনারা সবাই বক্তব্যে ‘টাইটেল’ দিতে দিতে সময় শেষ করে ফেলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যের কথা কারও মাথায় নেই। সবাই বলে, মেধাবী সাবেক ছাত্রনেতা। আমার চেয়ে মেধাবী ছাত্রনেতা নেই। এসব টাইটেল বন্ধ করুন। ৪৯ থেকে অথবা ৭৫ থেকে শুরু করা গতানুগতিক বক্তব্য দেয়ার ‘ট্রাডিশন’ থেকে আমাদের বের হতে হবে। এই সকল গতানুগতিক ভাষণ বর্জন করতে হবে।’ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওছারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, নির্মল রঞ্জন গুহ, মতিউর রহমান মতি, উম্মে রাজিয়া কাজল এমপি, শেখ সোহেল রানা টিপু, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, দেবাশীষ বিশ্বাস প্রমুখ। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত বিএনপিকে মেনে নিতে হবে- ড. হাছান ॥ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছে। তখন বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনে যেতে চাইলেও তারেক রহমানের কথায় এবং খালেদা জিয়ার একক সিদ্ধান্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সেই দায়ভার খালেদা জিয়াকেই নিতে হবে। খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত দেন তা মেনে নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। আর জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হোন যে আর কখনও আন্দোলনের নামে জনগণকে পুড়িয়ে হত্যা করবেন না। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের উদ্যোগে ‘রুখবো অপরাজনীতি-জঙ্গী-সন্ত্রাস, গড়বো সোনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি আসাদুজ্জামান দুর্জয়ের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সংগঠনের উপদেষ্টা সৈয়দা রোকেয়া বেগম প্রমুখ।
×