
ছবি: প্রতীকী
জীবনের কোনো এক পর্যায়ে আমরা অনেকেই জমি বা বাড়ি কেনার কথা ভাবি। তবে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না জানলে ভবিষ্যতে পড়তে হতে পারে নানা ধরনের বিরোধ এবং জটিল আইনি জটিলতায়। ব্যারিস্টার তাসমিয়া আঞ্জুম সম্প্রতি একটি ভিডিওতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন।
তিনি বলেন, জমি কিনতে গেলে শুধু দলিল করলেই হয় না। জমির ইতিহাস, মালিকানা, দখল এবং মামলাসহ বহু দিক বিবেচনায় না আনলে অনেক সময় তা চরম ভুল সিদ্ধান্তে পরিণত হতে পারে। বিশেষত এজমালি (যৌথ মালিকানাধীন) সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক না হলে আইনিভাবে জমির মালিকানা পেলেও ভোগ দখলে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কী এই এজমালি সম্পত্তি?
এজমালি সম্পত্তি হলো এমন একটি স্থাবর সম্পত্তি—যেমন জমি বা বাড়ি—যেখানে একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে মালিক হন, কিন্তু জমির নির্দিষ্ট অংশ ভাগ করে আলাদা করা থাকে না। অর্থাৎ, জমির প্রতিটি ইঞ্চির উপর প্রতিটি মালিকের সমান অধিকার থাকে। ব্যারিস্টার তাসমিয়া উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি একজন ব্যক্তি তার বাবার রেখে যাওয়া ১০ কাঠা জমি বিক্রি করতে চান, এবং তিনি চার ভাইবোনের একজন হন, তাহলে ওই জমি পুরো চার ভাইবোনের যৌথ মালিকানাধীন। সেখানে দুই ভাইবোন রাজি হলেও বাকি দুইজন রাজি না হলে ক্রেতা হিসেবে আপনি আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন।
কেন ঝুঁকি?
এই ধরনের জমিতে যদি কোনো লিখিত বণ্টননামা না থাকে, তাহলে এককভাবে একজন শরিকের কাছ থেকে জমি কিনে ফেলা মারাত্মক ভুল হতে পারে। অন্য শরিকরা ভবিষ্যতে আপত্তি জানিয়ে আপনার মালিকানাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।
জমি কেনার আগে কী কী করবেন?
১. ওয়ারিশ সনদ ও বণ্টননামা যাচাই
জমি বিক্রেতা যে সূত্রে মালিক হয়েছেন এবং তার পূর্বসূরিদের মালিকানা সম্পর্কিত দলিল (যেমন ওয়ারিশ সনদ, বণ্টননামা, নামজারি কাগজপত্র) যাচাই করা আবশ্যক। ওয়ারিশ সনদে প্রতিটি ওয়ারিশের নাম ও অংশ উল্লেখ থাকে, যা ভবিষ্যতে বিরোধের ঝুঁকি কমায়।
২. মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হোন
সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং সর্বশেষ ঢাকা সিটি জরিপ পর্যন্ত সকল খতিয়ান এবং বিক্রয় ইতিহাস সংগ্রহ করুন। এতে বুঝতে পারবেন জমিটির মালিকানা কিভাবে বদল হয়েছে এবং বর্তমান বিক্রেতা প্রকৃত মালিক কিনা।
৩. শরিকদের সম্মতি ও সাক্ষী রাখা
এজমালি সম্পত্তি কিনতে হলে, বিক্রয় চুক্তি ও দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় অন্যান্য মালিকদের সম্মতি এবং সাক্ষী হিসেবে রাখা সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
৪. মিউটেশন ও নামজারি যাচাই
বিক্রেতার নামে মিউটেশন হয়েছে কিনা এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ড হালনাগাদ আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
৫. দখল ও মামলার অবস্থা মাঠপর্যায়ে যাচাই করুন
জমিটি বর্তমানে কার দখলে আছে এবং কোনো মামলা বা বিরোধ আছে কিনা তা সরজমিনে গিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। অনেক সময় জমিতে দখল নিয়ে ক্রিমিনাল কেস বা দেওয়ানি মামলা চলতে থাকে—এসব জমি কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৬. মর্গেজ বা বন্ধক সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ
জমিটি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেয়া আছে কিনা তা খতিয়ে দেখুন। কারণ, মর্গেজকৃত সম্পত্তি বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমতি প্রয়োজন। অনুমতি ছাড়া বিক্রি করলে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে।
৭. সরকারি অধিগ্রহণ বা প্রকল্পের আওতায় পড়ছে কিনা তা জেনে নিন
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হতে হবে জমিটি খাস, পরিত্যক্ত, শত্রু বা কোনো সরকারি প্রকল্পের আওতাভুক্ত নয়।
ব্যারিস্টার তাসমিয়া আঞ্জুমের মতে, জমি কেনার আগে যত বেশি যাচাই-বাছাই করবেন, ভবিষ্যতের ঝামেলা তত কম হবে। শুধুমাত্র মোটা অংকের টাকা লেনদেন নয়, জমি কেনা মানে একটি বড় দায়িত্ব—যেখানে সচেতন না হলে আইনি ঝুঁকিতে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=3sNWbyQ9oFM
রাকিব