ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রাঙামাটির পক্ষীশালায় কিছুক্ষণ

খুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ৫ মে ২০২৪

রাঙামাটির পক্ষীশালায় কিছুক্ষণ

শেখ রাসেল এভিয়ারী অ্যান্ড ইকোপার্ক। 

বনবিদ্যায় পড়াশোনার সুবাদে প্রতি বছরই নতুন নতুন বনাঞ্চলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মেলে। সেরকমই এবার রাঙামাটির দক্ষিণ বন বিভাগের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ এলো। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যার পরেই সবাই জড়ো হলাম ক্যাম্পাসের ‘অদম্য বাংলা’ ভাস্কর্যের সামনে। এখন থেকেই শুরু আমাদের যাত্রা। রাত ৮টায় বাস ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল। ৯টায় শুরু হলো আমাদের যাত্রা।

পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তা বেয়ে কাপ্তাই বন উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ছাত্র হোস্টেলে বাস এসে পৌঁছাল শুক্রবার সকালে। সারা রাতের ক্লান্তিকর বাসযাত্রায় সবার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও, নতুন জায়গার প্রকৃতির রূপ দেখার উত্তেজনা ক্লান্তিকে দূরে রেখেছে।বাস থেকে নেমে এক ঘণ্টার বিশ্রামের পর আমাদের প্রথম গন্তব্য কর্ণফুলী পেপার মিল। পুরাতন এই কাগজকলের কিছু বিভাগ ঘুরে দেখলাম আর জেনে নিলাম এর অতীতের গল্প। হাজার হাজার শ্রমিক একসময় এখানে কাজ করতেন। এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ কাগজকল ছিল এটি। এখন যন্ত্রগুলোতে মরিচা ধরেছে, সব যেন থমকে থাকা এক গৌরবের চিহ্ন।সেখান থেকে আমরা রওনা হলাম শেখ রাসেল এভিয়ারী অ্যান্ড ইকোপার্কের উদ্দেশ্যে। সবুজের সমারোহের মাঝখানে গড়ে ওঠা এই ইকোপার্কটি মন কেড়ে নেওয়ার মতো। পার্কের টিকিট কেটে প্রবেশ করতেই ডান দিকে চোখে পড়ল কৃত্রিম লেক। স্বচ্ছ জল যেন পাহাড়ের সবুজ রঙ ধারণ করে রেখেছে। লেকের ওপর দিয়ে চলে ক্যাবল কার। কারে চড়ে উপর থেকে পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারলে কী দারুণ না হত! দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্যাবল কারটি বন্ধ থাকায় একটু মন খারাপ হয়ে গেল।গেইটের বামেই চোখ আটকে গেল ময়না পাখির খাঁচার দিকে। কাছে যেতেই খাঁচার ভেতর থেকে "হ্যালো" বলে আমাদের অভিবাদন জানাল। মজার ব্যাপার হলো- আমরা যা যা বলছিলাম, তারা তা নকল করার চেষ্টা করছিল। তাদের গলার আওয়াজ বেশ মিষ্টি!পাহাড়ি পথের দুইধারে নানা সাইজের খাঁচায় রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে বাঁকে বসার জায়গাগুলোতে একটু জিরিয়েও নেওয়া যায়।

হাঁটতে হাঁটতে প্রথমেই চোখে পড়ল হরিণের একটি বৃহৎ খাঁচা। ভেতরে কয়েকটি চিত্রা হরিণ স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পার্কের প্রতিনিধি থাকায় ভেতরে গিয়ে কাছে থেকেই তাদের দেখার সুযোগ হলো। আমাদের কয়েকজন ক্যামেরাবন্দী করল হরিণগুলোকে। এরপরে নজরে এলো ময়ূরের খাঁচা। নীল, সবুজ, কমলা রঙের মিশেলে সাজানো ময়ূরগুলোর ভঙ্গিমা দেখার মতো। কয়েকটি বসে আছে গাছের ডালে, বিশাল রঙ্গিন পাখা তাদের। আর যেসব পুরুষ ময়ূর লেজের পেখমগুলো মেলে ধরেছিল, সে এক অপরূপ দৃশ্য! ছয় ফুটের মতো লম্বা চমৎকার সোনালি ও নীল রঙের পালকে যেন কারুকার্য খচিত।খানিকটা সামনেই রয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি গুহা এবং পাখিদের চিকিৎসালয়। আর তারপরই দুটি বড় পাখির খাঁচা। নানা রঙের, নানা আকারের প্রায় হাজারখানেক পাখি রয়েছে এই পাখিশালায়। মদনটাক, ভিমরাজ, টিয়া, কাকাতোয়া, ময়ূর, প্যাঁচা, ডাহুক, হাঁস, মুরগি, টার্কি, ঘুঘু, ময়নাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।

পুরো পার্কটি পায়ে হেটে ঘুরে দেখতে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লেগেছে। রোদের তাপে সবার মধ্যেই ক্লান্তি চলে আসে। গেইটের পাশের ময়না পাখিদের বিদায় জানিয়ে শেখ রাসেল পাখিশালা ভ্রমণ এবারের মতো শেষ করলাম। অনেক স্মৃতি জমা করে নিয়ে বিদায় নিলাম। রাঙামাটির সৌন্দর্য মনে গেঁথে থাকবে অনেকদিন।

এম হাসান

×