ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১০ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

অফিস শেষে হাঁটার অভ্যাস শরীরে যে পরিবর্তন আনে

প্রকাশিত: ১২:২২, ১০ আগস্ট ২০২৫

অফিস শেষে হাঁটার অভ্যাস শরীরে যে পরিবর্তন আনে

ছ‌বি: প্রতীকী

অফিস শেষে হাঁটার অভ্যাস শরীর ও মনের জন্য এক অসাধারণ উপকার বয়ে আনে। দিনের দীর্ঘ সময় অফিসের চেয়ারে বসে কাজ করার ফলে শরীরে এক ধরনের ক্লান্তি, অবসাদ এবং কঠিনভাব জমে যায়। দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকার কারণে মাংসপেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে, রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং শরীরে অতিরিক্ত চাপ অনুভূত হয়। এই পরিস্থিতিতে অফিস শেষে কিছুক্ষণ হাঁটা শরীরকে নতুন করে প্রাণবন্ত করে তোলে। হাঁটা একটি সহজ কিন্তু কার্যকর ব্যায়াম, যা শরীরের প্রতিটি অংশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

দিনের বেলা অফিসে মানসিক চাপের মাত্রা অনেক সময় বেশি থাকে। নানা সময়সীমা, মিটিং, দায়িত্ব এবং কম্পিউটারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর ফলে মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অফিস শেষে হাঁটতে বের হওয়া এই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। খোলা বাতাসে হাঁটার সময় মস্তিষ্কে এন্ডরফিন নামের সুখের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মনকে ভালো করে দেয়। দিনের জমে থাকা দুশ্চিন্তা ধীরে ধীরে কমে আসে এবং মন সতেজ হয়। হাঁটার সময় আশেপাশের দৃশ্য দেখা, হালকা বাতাস অনুভব করা ও নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো মনকে নতুন উদ্যমে ভরে তোলে।

শারীরিক দিক থেকেও অফিস শেষে হাঁটার অনেক উপকারিতা রয়েছে। হাঁটার ফলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, হার্ট ভালো থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, কারণ হাঁটার সময় ক্যালরি খরচ হয় এবং চর্বি পোড়ে। যারা সারা দিন বসে কাজ করেন, তাদের জন্য হাঁটা শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং পেশিতে জমে থাকা শক্তভাব কমায়। হাঁটা হজম প্রক্রিয়াকেও সক্রিয় করে তোলে, বিশেষ করে যদি অফিস শেষে খাবারের আগে বা পরে কিছুটা হাঁটা হয় তবে তা হজমে সহায়ক হয়।

এছাড়া অফিস শেষে হাঁটা ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। সারা দিনের চাপের পর শরীর যখন হালকা ব্যায়াম করে, তখন মন ও শরীর স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসে। এতে রাতে ঘুম দ্রুত আসে এবং গভীর হয়। পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পরের দিনের কাজে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

হাঁটার আরেকটি ভালো দিক হলো, এটি কোনো বিশেষ সরঞ্জাম বা খরচ ছাড়াই করা যায়। অফিসের কাছাকাছি কোনো পার্ক, রাস্তা বা খোলা জায়গায় প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটতে পারলেই উপকার পাওয়া যায়। অনেকে অফিস শেষে সহকর্মী বা বন্ধুর সঙ্গে হাঁটতে পছন্দ করেন, এতে সামাজিক যোগাযোগও বাড়ে এবং একঘেয়েমি দূর হয়। আবার কেউ কেউ একা হাঁটার সময় গান শুনতে বা পডকাস্ট শুনতে ভালোবাসেন, যা হাঁটার অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে।

শুধু শারীরিক ও মানসিক উপকারিতাই নয়, হাঁটা মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত হাঁটার ফলে মানুষ নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি আরও যত্নবান হয়, খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসে শৃঙ্খলা আসে এবং কাজের সক্ষমতা বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা অনেক দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অফিস শেষে এই সময়টুকু হাঁটার জন্য বরাদ্দ করলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে পরিণত হয়, যা জীবনের মান উন্নত করে।

অফিস শেষে হাঁটার অভ্যাস আসলে একটি ছোট পরিবর্তন, কিন্তু এর প্রভাব অনেক বড়। আধুনিক জীবনে ব্যস্ততার ভিড়ে আমরা প্রায়ই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিতে ভুলে যাই। অথচ প্রতিদিন মাত্র কিছুটা সময় বের করে হাঁটা শরীর, মন এবং জীবনে এক নতুন সজীবতা এনে দিতে পারে। তাই কাজের চাপ যতই থাকুক না কেন, অফিসের পর হাঁটার জন্য কিছু সময় আলাদা রাখা নিজের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। এই অভ্যাস শুধু সুস্থতার জন্য নয়, বরং সুখী ও সুষম জীবনের জন্যও অপরিহার্য।

এম.কে.

×