
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলা ঘরের চেনা উপাদান কালোজিরা শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, বরং আয়ুর্বেদ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসায় যুগের পর যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এর তেল। আধুনিক গবেষণায়ও উঠে এসেছে এই তেলের একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা—ব্যথা কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, চুল ও ত্বকের যত্ন এমনকি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর হতে পারে কালোজিরা তেল।
ব্যথা ও প্রদাহ উপশমে কার্যকর
বিশেষজ্ঞদের মতে, কালোজিরা তেলে থাকা থাইমোকুইনোন নামক একটি উপাদান শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত এই তেল মালিশ করলে হাঁটুর ব্যথা, জয়েন্টের যন্ত্রণা কিংবা পিঠের নিচের অংশের ব্যথা উপশম হয়। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আরাম পেতে অনেকেই এখন বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন এই তেল।
পুষ্টিগুণে ভরপুর
কালোজিরা তেল সমৃদ্ধ প্রোটিন, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, কপার ও ফসফরাসে। এসব উপাদান শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধিতেও এটি সহায়ক, এমনকি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে—নিয়মিত ব্যবহারে রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, কালোজিরার তেল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। প্রতিদিন মাত্র অর্ধ চা-চামচ তেল খাওয়াতেই অনেকের রক্তচাপে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। একইসঙ্গে, এতে থাকা পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে উপকারী কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা পাওয়া গেছে।
ওজন কমাতেও সাহায্য করে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম ক্যালরির ডায়েটের সঙ্গে নিয়মিত ৩ গ্রাম করে কালোজিরার তেল গ্রহণ করেছেন, তাদের বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ও ওজন কমেছে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনও বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ত্বক ও চুলের যত্নে
কালোজিরা তেলের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ব্রণ সারাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ শতাংশ কালোজিরা তেলের লোশন ব্রণ কমাতে প্রচলিত চিকিৎসার মতোই কার্যকর। এটি ত্বক আর্দ্র রাখে ও একজিমার মতো চর্মরোগও প্রশমিত করতে পারে।
চুলের যত্নে অনেকেই বলেন, কালোজিরা তেল চুল ঘন করতে সাহায্য করে। যদিও এই দাবির পক্ষে এখনো শক্ত গবেষণা নেই, তবে কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে যে তেলের উপাদানগুলো চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতায় ইতিবাচক প্রভাব
কালোজিরার তেল শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান উন্নত করতেও সহায়ক হতে পারে বলে কিছু গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। অনুর্বর পুরুষদের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, তেল গ্রহণকারীদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও গতি বেড়েছে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
কালোজিরার তেল ক্যাপসুল বা তরল রূপে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা ১০০ শতাংশ কোল্ড-প্রেসড তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন। শুরুর দিকে দিনে ১/২ চা-চামচ গ্রহণ করাই নিরাপদ। তবে যেকোনো ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারা ব্যবহার করবেন না
যদিও সাধারণভাবে কালোজিরা তেল নিরাপদ, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যারা ওষুধ নিচ্ছেন, বিশেষ করে বিটা-ব্লকার জাতীয় ওষুধ, তাদের জন্য তেলটি ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। কিডনি সমস্যায় ভোগা বা গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে এই তেল ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন। এছাড়া ত্বকে ব্যবহারে অল্প মাত্রায় জ্বালাপোড়া বা চুলকানি, আর সেবনে কোষ্ঠকাঠিন্য, বমিভাব দেখা যেতে পারে।
শেষ কথা
প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরচর্চা ও সুস্থ থাকার পথে যারা হাঁটছেন, তাদের জন্য কালোজিরা তেল হতে পারে দারুণ একটি সহায়ক উপাদান। তবে এর যথাযথ ব্যবহার ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকটি বিবেচনা করেই গ্রহণ করাই উত্তম।
আলীম