সাদিয়া
সুন্দর হস্তলিপিকে ক্যালিগ্রাফি বা চারুলিপি বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এর প্রচলন আছে। যেকোন ভাষায় ক্যালিগ্রাফি হতে পারে। আরবি ক্যালিগ্রাফি অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে এবং এটাই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এই আরবি ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন সাদিয়া ইসলাম। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাাতকোত্তরের একজন শিক্ষার্থী। সাদিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, ক্যালিগ্রাফি বিষয়টা তিনি প্রথম শুধু দেখতেন দিনপঞ্জিকায়।
সেখান থেকেই তার মনে এগুলো আঁকার চিন্তা আসে। কিন্তু পড়াশোনার চাপে আর হয়ে ওঠেনি। এরপর করোনার বন্ধে শুরুর দিকে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফারদের আঁকা দেখে আঁকতে চেষ্টা করেন তিনি। ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য তিনি এ পর্যন্ত অনলাইনে দুটি কোর্স শেষ করেছেন। এরপরই তিনি তার জীবনের প্রথম ক্রেতার সম্মুখীন হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম ব্যাচের একজন তাকে বাসায় ক্যালিগ্রাফি করে দেয়ার জন্য বলে। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি তাকে। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে খুলেছেন ‘ফাউন্টেইন অব ক্যালিগ্রাফি’ নামক একটি ফেসবুক পেজ। এখন পর্যন্ত তিরিশের ওপর কাজ করেছেন তিনি।
কাজ শুরু করার প্রথম দিকে নানামুখী চাপ ছিল তার ওপর। এসব কাজ সামলেই তিনি এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন তার কাজ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবার থেকে এই কাজ নিয়ে প্রথমে একটু সমস্যা ছিল। মায়ের দিক থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট থাকলেও আমার বাবাকে যখন প্রথম এই বিষয়ে বলি তখন বাবা বলেছেন, তুমি মেয়ে, তুমি কেন ব্যাবসা করবে? সেই আমি এখন আমার আয়ের টাকা থেকে প্রায়ই বাবাকে টাকা দেই। এখন বাবা উল্টো আমাকে নিয়ে গর্ব করেন। এছাড়া শুরু থেকে এই যাত্রায় বন্ধুদের সাপোর্ট ছিল সেটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই।
অনুপ্রেরণার জায়গা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের এক আপু আমাকে ওনার বাসার ক্যালিগ্রাফি করে দেয়ার জন্য বলে। তখন আমার মাথায় আসল এটা আমি প্রফেশনালি নিতে পারি। তারপর আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা পেজ খুলে ফেললাম। সেখান থেকে ধীরে ধীরে কাজ আসতে থাকে। সিনিয়র আপুর অর্ডারটাই আমার জন্য অনুপ্রেরণা।
বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ভবিষ্যত নিয়ে তিনি বলেন, আগে ক্যালিগ্রাফি বিষয়টা নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠীর ভেতর আবদ্ধ ছিল কিন্তু এখন এটা ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এটা আরও বেড়েছে। তাই অন্যান্য পেইন্টিং কেনার চেয়ে ক্যালিগ্রাফি কেনার ক্ষেত্রে মানুষের একটু বেশিই আগ্রহ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন অনেকে ক্যালিগ্রাফি উপহারও দিচ্ছে। আমি বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আশাবাদী।