ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রং তুলিতে জীবনের লক্ষ্য

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

রং তুলিতে জীবনের লক্ষ্য

রং তুলিতে জীবনের লক্ষ্য 

শস্য শ্যামল সুশোভিত বাংলাদেশ বরাবরই এক দৃষ্টিনন্দন চমৎকার অঞ্চল। সমুদ্র পরিবেষ্টিত আর নদী বিধৌত নান্দনিক বাংলা তার চিরস্থায়ী সম্ভারে স্বদেশী কবি-সাহিত্যিকদের বিমুগ্ধ করে গেছে। আর ভিনদেশী পর্যটকরা শিল্পীত অনুভবে আবহমান বঙ্গভূমিকে স্বরূপে উদ্ভাসিত করার ইতিবৃত্তও মুছে যাওয়ার বিষয় নয়।

ফরাসি পরিব্রাজক বার্নিয়ার সেই সপ্তদশ শতকে বঙ্গভূমির অপরূপ লাবণ্যে বিমুগ্ধ হন। বিস্ময়াবিভূত হয়ে বলেছিলেনÑ এ দেশে ঢোকার বহু পথ আছে কিন্তু বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই। অর্থাৎ নয়নাভিরাম বাংলার অপরূপ মাধুর্যে প্রবেশের পথ চিহ্নিত থাকলেও কোন রাস্তা দিয়ে নির্গমন করা যাবে তা সুললিত বাংলায় সত্যিই অদৃশ্য। তেমন অনিন্দ্যসুন্দর বাংলার এক কন্যার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। ইকরা আমিনা কাইয়ুম। সুন্দর কথনে নিজের শিক্ষা জীবন নিয়ে উচ্ছ্বসিত আবেগ যেন ঢেলে দিল।

সত্যিই শ্যামল বাংলার চিরায়ত শৌর্যে অভিভূত শিক্ষা জীবনের বিষয় হিসেবে বেছে নিল চারুকলাকে। রং তুলির পরম নির্মাল্যে চলার পথের লক্ষ্য নির্ধারণ যেন অনন্য চেতনা। ধানমন্ডির ইউডার চারুকলার একজন শিক্ষার্থী। শুধু রং তুলি নয় শিল্পীত অনুভবে হরেক নান্দনিক বোধ তাকে প্রতিনিয়ত বিভোর করে দেয়। রং তুলির অঙ্কনের নেশায় সুরের অনন্য মূর্ছনাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্ট করে রাখে। সেখানে সবার সামনে এসে দাঁড়ান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল।

সুর বাণির সূক্ষ্ম কারুকার্য আর রাগ-রাগিণীর অনন্য ঝঙ্কার যেন যুগ-যুগান্তরের বাংলার পরম নিবিষ্ট সাধনা। হ্যাঁ নজরুল সংগীতই ইকরাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। তবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকেন না। চিত্রাঙ্কনে গভীর মনোনিবেশ। ইকরা সেখানেই রবীন্দ্র প্রীতিকে ধারণ-বরণ করলেন। কোনো এক সময় আঁকিয়ে হিসেবে বিশ্বকবির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। কবির লেখনিতে আছে নিজের সৃষ্টির প্রতি চরম অবিচার করা। পছন্দ না হলে কেটেকুটে একাকার।

পরবর্তীতে কখনো ফিরে তাকানোর প্রয়োজনও বোধ করেননি। তবে আর্জেন্টিনার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোই প্রথম তীক্ষèভাবে লক্ষ্য করলেন কাটাকুটির মধ্যেই কবির আঁকিয়ে হওয়ার অপার সম্ভাবনা জিইয়ে আছে। প্যারিসে কবির চিত্র প্রদর্শনীর ঘটনা আজও উদীয়মান চিত্রশিল্পীদের প্রাণিত করে যাচ্ছে। ইকরা তেমন সম্ভাবনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কবি গুরুর প্রতি সম্মান জানালেন অকুণ্ঠ চিত্তে।

শুধু চিত্র নয় কবির গানও তাকে অন্যভাবে আবিষ্ট করে রাখে। এমন সব গল্প উল্লেখ করা হলো ইকরার নান্দনিক শিক্ষা জীবন শুধু রং তুলির শিল্প কর্ম নয় বরং সুর বাণির যথার্থ অলঙ্করণে সংগীতের প্রতিও যথেষ্ট আগ্রহ। উচ্চ মাধ্যমিকে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী কি এক অদম্য প্রেরণায় চারুকলার মতো বিষয়কে ধারণ করল সেখানেই স্পষ্ট হয়ে আছে শৈল্পিক অনুরণনের পরম মাহাত্ম্য। শুধু তাই নয় অর্থনীতিতে সম্মান নিয়ে ভর্তি হওয়াও এক প্রকার পালাক্রম।

সেখান থেকে চারুকলায় নিজের নিবেদন সম্পূর্ণ আগামীর জীবনবোধকে শাণিত করার অনন্য যাত্রা। তেমন তৃপ্তি আর আনুকূল্যে জীবন কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকে। তবে ছবির নানামাত্রিক রং তুলির বৈভবতায় দেশের ভাষা আন্দোলন আর জাতির স্থপতির পেইন্টিং করে নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন শিক্ষক শাহজাহান আহমেদ বিকাশ।

সেখানে মাতৃভাষার প্রতি পরম নিবেদন আর বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের যে রং তুলির শিল্পীত অনুভব সেটাও ছাত্রী ইকরাকে আনন্দ আবেগে বিভোর করে রাখে। এক নতুন প্রজন্ম ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধকে সাবলীলভাবে চেতনায় ধরে রেখেছেন শিল্পীত রঙিন আবহে। এ ছাড়াও আছে শ্যামল বাংলার সবুজ প্রান্তরের যে অবর্ণনীয় সুষমা সেটাও যেন চিত্রশিল্পীদের জন্য পরম নিশানা, আর আকর্ষণ তো বটেই। শৈশব থেকে আঁকার প্রতি ঝোঁক, মুগ্ধতা, রঙিন আবহ বরাবরই উদ্বেলিত করে ইকরাকে।

তার সঙ্গে অবিমিশ্রভাবে যুক্ত হয়ে চারপাশের বাহারি রঙের মাধুর্য আর মেঠো সুর। অভাবনীয় এক যুগল সম্মিলন। শিক্ষক শাহজাহান আহ্মেদ বিকাশের জন্ম ১৯৫২ সালেরও পর। কিন্তু তার হাত দিয়ে ভাষা শহীদ সালামের চিত্রাঙ্কন রং তুলির নিবিড় কারুকার্যে। ছাত্রী জানালেন সালামের বোনের কাছ থেকে ভাইয়ের চেহারার বৃত্তান্ত শুনে স্যার যে চিত্রকল্প উপহার দিলেন সেটা যেন মাতৃভাষা আর মাতৃভূমির প্রতি পরম অর্ঘ্য দেওয়া। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর পরিবার নিয়ে যে রং তুলির শিল্প বোধ নিয়ে আসেন শ্রদ্ধাভজন শিক্ষক সেটাও দেশের অমূল্য রতন। নিজের ভাষা আর দেশকে এভাবে মর্যাদা দিল ইকরা। 
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×