ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সফল ফার্মাসিস্ট

অপরাজিতা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:২৬, ৩ মে ২০২৪

সফল ফার্মাসিস্ট

সফল ফার্মাসিস্ট

বাংলাদেশ উন্নয়ন পালাক্রমে দৃষ্টিনন্দনভাবে এগিয়ে চলা দৃশ্যমান করে যাচ্ছে। সমাজের সার্বিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে উন্নয়ন সেভাবে দৃশ্যমান হতে বারবার হোঁচটও খায়। তাই সন্দেহাতীতভাবে সমসংখ্যক নারীর সমান তালে এগিয়ে যাওয়ার চিত্রও স্বস্তিদায়ক। শুধু তাই নয় যুগের দাবি এবং সময়ের ন্যায্যতায় নারী সমাজ আজ নিজেদের তৈরি করতে সেভাবে পেছনেও পড়ে থাকছে না।

নারী শিক্ষা আজ অবারিত, সার্বজনীন। সেটা ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙিনা থেকে বৃহত্তর সামাজিক বলয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত বললে বেশি নয় কিন্তু। এক সময়ের গৃহলক্ষ্মী নারীরা আজ সামাজিক আবেদনে নিজেদের ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এসে তাদের কর্মসফলতা, পেশাগত দক্ষতা সবই প্রমাণ করেই যাচ্ছে। কোনো এক সময়ে শিক্ষিত নারীরা পেশা হিসেবে শিক্ষকতা এবং চিকিৎসক হিসেবেই নিজেদের পছন্দের জায়গায় বিবেচনা করত।

আজ সেখানে শিক্ষা প্রণালীর সম্প্রসারিত সময়ে নতুন বিষয় যুক্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানে আলো ছড়াচ্ছে। তাই এখনকার শিক্ষিত নারীরাও ভিন্নমাত্রার পেশায় সম্পৃক্ত হয়ে যুগ ও সময়ের অনুষঙ্গ হতে দেরি লাগছে না। ইশরাত জাহান অনামিকা তেমন একজন সফল ওষুধ নির্মাতা। যিনি কি না প্রচলিত পেশার বাইরে গিয়ে নতুন এক কর্মসাধনায় নিমগ্ন হন। বগুড়ার মেয়ে ইশরাত জাহান। শৈশব-কৈশোর অতিক্রম করেন এখানেই।

শিক্ষা জীবনের শুরু ও এই বগুড়াতেই। পিতার নাম মো. ইসমাইল হোসেন। মায়ের নাম মোছাঃ আঞ্জুমনারা বেগম। এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ইশরাতই বড়। ভাই তার এগারো বছরের ছোট। বাবা মূলত ব্যবসা করেন আর মা সুদক্ষ গৃহিণী। নিপুণভাবে সংসার কার্য সমাধা করে হাঁস-মুরগি লালন পালন করে নিজের যাপিত জীবন সাবলীল আর স্বাচ্ছন্দ্যে এগিয়ে নিচ্ছেন। আর পিতার আছে  মুরগির খামার।
নিজের পৈত্রিক আবাসস্থল ছেড়ে বাইরের শিক্ষা এবং পেশাগত জীবনকে সমানভাবে চালিয়ে নিতে হয়েছে। পেছন ফিরে তাকানোর সুযোগই ছিল না। তার পরও মন খারাপের বিব্রতকর অবস্থা পাশও কাটাতে হয়। স্বভাবগতভাবেই চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। হৈ-হুল্লোড় খুব বেশি ভালোও লাগে না। জীবন চলে জীবনের নিয়মে এমন বেদবাক্যে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়েছে সব ধরনের পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে।

বর্তমানে পেশা হিসেবে নির্বাচন করে যে প্রতিষ্ঠানে নিজেকে যুক্ত করেন সেটা ‘বাংলা হেলথ কানেক্ট লিমিটেড।’ যেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবনকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন। ২০২২ সালে পারিবারিকভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হয়। তবে পছন্দ নিজেদের দুজনের। বর্তমানে একজনের ঘরনি হয়েও কর্মজীবনে তার কোনো আঁচই লাগতে দেননি। স্বামীও অত্যন্ত মানবিক এবং সহানুভূতিশীল। যার কারণে তেমন কোনো জায়গায় বিয়ের পরও আপোস করতে হয়নি।

এটাকে অনেক বড় প্রাপ্তি মনে করেন দুজনেই। স্বামী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। সব মিলিয়ে ইশরাত জাহান নিজের জীবনকে সফল এবং পূর্ণতার দিকে চালিয়ে নিচ্ছেন। নিজেকে মেয়ে নয় বরং বরাবরই মানুষ ভেবেছেন। মানুষের মর্যাদায় নিজেকে গড়ে তোলাও এক অনমনীয় বোধ। আজ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমান পদচারণা সেটাও মানুষের সম্মানে নিজেকে তৈরি আর গড়ে তোলার অদম্য যাত্রাপথ। নারী-পুরুষের ভেদাভেদ যতই কমবে সমসংখ্যক নারী ততই দৃপ্ত পায়ে, স্বাচ্ছন্দ্যভাবে জীবনকে এগিয়ে নিতে অনেক বেশি সফল হবে।

নারীদের অদম্য অগ্রযাত্রা আজ সময়ের চাহিদা। তাই নির্দিষ্ট কোনো বিষয় কিংবা বিভাগ নয় সর্বক্ষেত্রে তাদের দুরন্ত অভিগামিতা আগামীর বাংলাদেশকে নিত্য নতুন সম্ভারে ভরিয়ে দিতে ক্রমাগত এগিয়েই যাবে। 
সেটাই সংসারের আয়-রোজগারের স্বচ্ছ স্বাভাবিক পথ। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পিতাকে ব্যবসা সামলাতে দেখেছেন। সেটাও কন্যাকে নানামাত্রিকে উদ্বেলিত করত। মায়ের হাঁস-মুরগি পালন মানেই স্বামীর ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করা। অর্থাৎ আনন্দ আয়োজন আর সচ্ছল পারিবারিক আবহে জীবনতরী এগিয়ে নেওয়া যেন সমাজ সংস্কারের অবধারিত যাত্রাপথ। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলেন বগুড়া আশাতুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয় থেকে।

আর উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলেন বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। এর পর পর উচ্চ শিক্ষায়  পদার্পণ। মানে হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আরও বৃহত্তর শিক্ষাঙ্গনে পড়াশোনার সুযোগ জীবনের পরম পাওয়া। তেমন অবারিত শুভক্ষণে বিচ্ছিন্ন হতে হয় বাবা-মায়ের নিকটতম সাহচর্য থেকে। চলে আসতে হয়েছে বগুড়া থেকে রাজধানী ঢাকায়। ভর্তি হন স্বনামখ্যাত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিভাগটিও অনন্য মাত্রার। ফার্মেসি। ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হবার।

তেমন আশায় বিজ্ঞানের ছাত্রী হতে বেশি ভাবতে হয়ইনি। ওষুধের সঙ্গে চিকিৎসার যে নিবিড় সখ্য সেখানে শিক্ষার্থীর বিষয়টাও নানামাত্রিকে ভেতরের বোধে সাড়া জাগায়। কিন্তু আগের থেকেই একলা থাকার অভ্যাস ছিলই না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ঢাকায় থাকতে বড় বেশি একাকিত্বে ভুগছেন ইশরাত। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগে স্নাতক করে প্রাসঙ্গিক ইন্টার্নশিপও সম্পন্ন করাও প্রাতিষ্ঠানিক বিধি ব্যবস্থার অধীন।

পরবর্তীতে অবশ্যই বিষয়ভিত্তিক কোনো পেশায় নিজের কর্মজীবন শুরু করা। ঢাকার নিকুঞ্জতে বিপিও সেন্টারে প্রাথমিকভাবে গ্রাহকসেবার কাজে নিজের অভিযাত্রা পেশাগত অধ্যায়কে মূলত স্বাগত জানানো। তবে সেই যে বগুড়া থেকে চলে আসার পর একাকিত্বের ধকল সেভাবে নিষ্কৃতিও দেয়নি। তার ওপর নিকটজনদের কাছে না থাকার বেদনাও কম ছিল না। সব সময়ই খারাপ লেগেছে। 
অপরাজিতা প্রতিবেদক

×