ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আপত্তিকর শব্দবাণ...

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

আপত্তিকর শব্দবাণ...

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে নিরন্তর এগিয়ে যাচ্ছে। অর্ধাংশ নারীরা যদি এই অগ্রযাত্রায় শামিল হতে না পারত সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি সেভাবে দৃশ্যমান হতো না। সর্বক্ষেত্রে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ব্যক্তিক সফলতাকেই তুলে ধরছে না পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও এর প্রভাব স্পষ্টত লক্ষ্যণীয়। এক সময় পেশা বলতে মেয়েরা শিক্ষকতা কিংবা নিদেনপক্ষে চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নিজেকে তৈরি করত। কিন্তু সময়ের দুর্বার মিছিলে পুরো দেশ যখন অব্যাহত যাত্রায় অর্জনের সুবর্ণ পর্বে তখন নারীরাও সীমাবদ্ধ অঙ্গন থেকে বৃহত্তর পর্যায়ভুক্ত হতে দেরি করেনি। উন্নয়নের নানা মাত্রিক যাতে নারীদের জোরালো অংশগ্রহণ দেশ ও জাতির এক অনবদ্য সফল অভিযোজন। প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, বিমান চালানো, ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রধানতম পদ অলঙ্কৃত করা সর্বত্র নারীদের অবারিত গমন যেভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে তাতে এ কথাই সুবিদিত যে কোথাও তারা আজ পিছিয়ে নেই। গ্রামনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির প্রান্তিক কৃষকের সারিতে নারী শ্রমজীবীর অবস্থান নজর কাড়ার মতো। আর দেশের পোশাক শিল্পের নারীদের সক্রিয় কর্মদ্যোতনা এই খাতকে বিশ্ব মর্যাদায় আসীন করেছে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের পদচারণা একটু দেরিতে হলেও এখন তা আর হাতে গোনার মতো অবস্থায় নেই। দুর্বার স্রোতধারায় সমতাভিত্তিক অংশগ্রহণে গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখা আজ উজ্জ্বল, সম্প্রসারিত এবং বহুল আলোচিতও। সমতাভিক্তিক অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান আজ বিশ্ব মর্যাদায়। সেভাবে সাংবাদিকতার ভুবনে পা রাখাটা ও নারীদের জন্য যতই চ্যালেঞ্জিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ হোক না কেন তারা আজ এই খাতের বিশিষ্ট জন। তাদের বাদ দিয়ে গণমাধ্যমের কোন শাখাকেই পূর্ণাঙ্গ ভাবা যায় না। শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বলই শুধু নয় সমাজকর্তৃক অবহেলিত এই গোষ্ঠী সব সময়ই নিজেই মান-মর্যাদা এবং অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত-দোদুল্যমান। তার পরেও দেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান অবাধ আর মুক্তই নয় অবারিতও বটে। নারী নির্যাতন আর সহিংসতার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তাকে আমলে নিয়েও বলা যায় অনুকূল স্রোত বইয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। গণমাধ্যমের কর্মীরা দেশ ও জাতির সচেতন অংশ। তারা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে সর্বসাধারণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে সর্বদা। কোন নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধিত্ব না করলেও একটি সুষ্ঠু আদর্শিক চেতনায় সে যেমন ঋদ্ধ হয় পাশাপাশি সংবাদ প্রচারেও সেই বোধ তাকে তাড়িত করে। নিবেদিত সংবাদ কর্মীর এই এক অনন্য মানবিক আর মানসিক দায়বদ্ধতা যেখান থেকে সে নিজেকে কোনভাবেই সরিয়ে নেয় না। এই পেশায় যেমন অর্থ-বিত্তের কোন আসক্তি থাকে না একইভাবে অনিশ্চিত এই কর্মজীবনে কোন আশা আকাক্সক্ষা এবং প্রত্যাশাও থাকে না। এমন এক মহৎ কর্মযজ্ঞে নারী-পুরুষ সবাই মিলিতভাবে এই বিশেষ অঙ্গনটিকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে। এখানে লিঙ্গ বৈষম্যের কোন বালাই নেই, নারী বলে হীনম্মন্যতায়ও কাউকে ভুগতে হয় না। যোগ্যতা আর মর্যাদার ভিত্তিতে প্রত্যেকে তার আসন মজবুত করে যাচ্ছে। যে কারণে এত কথা সেই নির্দিষ্ট আলাপ চারিতায় আসতে চাই। ৭১ টিভির টক শো যার দায়িত্বে ছিলেন মিথিলা ফারজানা যিনি এখনও নারী সাংবাদিকতা ইতিহাসে একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা এখনও তাকে সবিনয়ে শ্রদ্ধা করি। এই অনুষ্ঠানে মূলত সাংবাদিকদের মাধ্যমে কোন সাময়িক ঘটনা প্রবাহের অবতারণা করা হয়। প্রয়োজনে অন্য কোন বিশেষ ব্যক্তিকেও ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। মূল আলোচকের একজন ছিলেন ‘দৈনিক আমাদের অর্থনীতি’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি। আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে নতুনভাবে সংগঠিত ঐক্যফ্রন্ট নিয়েও বক্তব্যের অবতারণা করা হয়। মাসুদা ভাট্টির অত্যন্ত যুক্তিসম্মত একটি প্রশ্ন ছিল ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এই ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন কিনা। এই যৌক্তিক প্রশ্নের অনেক সদুত্তর ছিলÑ শালীনতা বোধের আবশ্যিকতাকেও অবহেলা করা যায় না। অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে জনাব হোসেন এই বিশিষ্ট সাংবাদিককে যেভাবে লাঞ্ছিত করলেন উত্তপ্ত বাক্য নিয়ে তা শুধু শিষ্টাচারবহির্ভূতই নয় মানবিক বোধেরও চরম লঙ্ঘন। সাংবাদিকদের ওপর বিষোদগার এই প্রথম নয়। গণমাধ্যম কর্মীদের অপমানিত হওয়ার ঘটনাও একেবারে নতুন নয়। সেটা হয়েছে অবস্থার প্রেক্ষাপটে, কোন শোচনীয় কিংবা অসহনীয় পরিস্থিতি মোকাবেলায়। কিন্তু ভদ্র, মার্জিত টক শোতে কোন সাংবাদিক লাঞ্ছনা তাও আবার তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যম- যা পুরো দেশ দেখছে সেখানে এমনতরো অশালীন বক্তব্য সবাইকে মর্মাহত করে। একটি সরাসরি প্রশ্ন যা সবার কাছে সুবিদিত সে প্রশ্নের উত্তর আদৌ দেবেন না বলে জনাব হোসেন সাংবাদিক মাসুদাকে ‘চরিত্রহীন’ বলতে পারলেন ভাবাই যায় না। টক শোটি যারা দেখেছেন তারা নির্দ্বিধায় বলবেন এমন অবান্তর, অশোভন শব্দটি প্রয়োগ করার কোন যৌক্তিক কারণ তো ছিলই না বরং সাংবাদিকের প্রশ্নের সঙ্গে তার সামান্যতম মিলও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই কি শুধু কোন নারীকে অপমান করা? নাকি এমন একটি মহৎ কর্মযোগকে ধুলায় লুটিয়ে দেয়া? অপমান যখন করা হয় সেখানে লিঙ্গ বৈষম্য একেবারে গৌণ। মনে করা সঙ্গত পুরো ব্যবস্থার ওপরই এক নগ্ন আক্রমণ। শুধু তাই নয় সাংবাদিকতার জগতকেও বৃদ্ধাঙ্গুল দেখালেন। এমন আপত্তিকর, অপ্রাসঙ্গিক উত্তর শুধু ক্ষমা চাওয়ার মধ্যেই তার অপরাধ খ-ন হয় নাÑ আইনানুগ ব্যবস্থাও তার সুরাহা করতে পারে না। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি আটক হন। জামিনে যাকে ছাড়া না পান? বিনা দোষে, কোন অপরাধ না করেও একজনকে ‘চরিত্রহীন’ বলাটা ক্ষমার অযোগ্য, নীতিবহির্ভূত অপকর্ম। যার প্রাপ্ত শাস্তি ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে’ হওয়া জরুরী ছিল। আমরা আশা করব আইন শুধু নিজের গতিতেই চলবে না- অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় আরও শক্তিশালী ও তাৎক্ষণিক হবে। তা না হলে এমন অন্যায়-অপকর্মের মাত্রা কমবে না। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×