
ছবি: সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান কাতারে অবস্থিত বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল-উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামলার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র 'ফোর্স প্রোটেকশন' বা নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছিল।
আল-উদেইদ ঘাঁটি কী?
কাতারের রাজধানী দোহা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে মরুভূমির মাঝে অবস্থিত আল-উদেইদ ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের (CENTCOM) প্রধান সদরদপ্তর। এটি কাতারের গ্যাস সমৃদ্ধ অঞ্চলে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কাতার এবং অন্যান্য দেশের সামরিক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এখানে প্রায় ১০,০০০ সেনা কর্মরত। কাতার ইতোমধ্যে ঘাঁটির অবকাঠামো উন্নয়নে ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। মূল উদ্দেশ্য ছিল—মধ্যপ্রাচ্যে একটি কৌশলগত ঘাঁটি তৈরি, যা পারস্য উপসাগর অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতিকে শক্তিশালী করবে।
কী ঘটেছে সোমবার রাতে?
সোমবার বিকেলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির উপদেষ্টা আলী আকবর ভেলায়েতি ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে। রাতেই দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পরবর্তীতে জানা যায়, ইরান আল-উদেইদ ঘাঁটির ওপর হামলা চালিয়েছে এবং কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কাতার এই হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি
যুক্তরাষ্ট্র হামলার আগে থেকেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, ঘাঁটির রানওয়েতে থাকা ৪০টির মতো সামরিক বিমান গায়েব হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে ছিল Hercules C-130 এবং গোয়েন্দা বিমান।
এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, খোলা আকাশে থাকা বিমানগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়া বাহরাইনের পোর্ট থেকেও মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ সরিয়ে নেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইরান হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের কোনো ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়নি। বোমারু বিমান B-2 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির হোয়াইটম্যান এয়ার ফোর্স বেস থেকে সরাসরি আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে ইরানে আঘাত হানে। আল-উদেইদ ঘাঁটি এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেনি।
কাতার এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মজেদ আল আনসারি এক বিবৃতিতে বলেন, "আমরা ইরান রেভোলিউশনারি গার্ডের আল-উদেইদ ঘাঁটিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এটি কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।"
উল্লেখ্য, কাতার ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও, কাতার যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি থাকা অবস্থায় এমন হামলা তাদের কৌশলগত অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
মুমু ২