ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

হোয়াটসঅ্যাপে ইসরায়েলি নজরদারি! ইরানিদের অ্যাপ ডিলিটের আহ্বান

প্রকাশিত: ১৮:১০, ১৮ জুন ২০২৫

হোয়াটসঅ্যাপে ইসরায়েলি নজরদারি! ইরানিদের অ্যাপ ডিলিটের আহ্বান

ছবি: সংগৃহীত

এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ, যার মাধ্যমে বার্তা শুধু প্রেরক ও প্রাপকই পড়তে পারেন, এই নিশ্চয়তা দিয়েই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে অ্যাপটি। কিন্তু ইরানে হঠাৎ করে হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

 

 

মঙ্গলবার বিকেলে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে এক ঘোষণায় দেশটির নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল থেকে মুছে ফেলার আহ্বান জানানো হয়। দাবি করা হয়, অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে তা ইসরায়েলে পাঠাচ্ছে। তবে এই গুরুতর অভিযোগের পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ পেশ করা হয়নি।

এই ঘোষণার পরপরই হোয়াটসঅ্যাপ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, "এই সময় যখন মানুষ নিরাপদ যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপের মতো সেবার ওপর নির্ভর করছে, তখন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে তা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।"

হোয়াটসঅ্যাপ আরও জানায়, তারা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা বার্তাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ফলে বার্তা কেবল প্রেরক ও প্রাপকই পড়তে পারে, মাঝপথে কেউ তা ধরলেও শুধুই অপ্রবেশযোগ্য কোড হিসেবে দেখা যায়।

 

 

তারা আরও দাবি করে, "আমরা ব্যবহারকারীর অবস্থান ট্র্যাক করি না, কার সঙ্গে কে যোগাযোগ করছে তার লগ রাখি না এবং ব্যক্তিগত বার্তা পর্যবেক্ষণ করি না। তদ্ব্যতীত, আমরা কোনো সরকারের কাছে গণহারে তথ্য সরবরাহ করি না।"

তবে এই আত্মবিশ্বাসের মাঝেও কিছু বাস্তবিক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কর্নেল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ গ্রেগরি ফ্যালকো বলেন, হোয়াটসঅ্যাপের বার্তাগুলো এনক্রিপ্টেড হলেও মেটাডেটাগুলো (যেমন, চ্যাটের সময়, যোগাযোগের ধরন) এনক্রিপ্টেড নয়। এইসব মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে ব্যবহারকারীর আচরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, "এই কারণেই বহু ব্যবহারকারী হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে থাকেন।"

একই সঙ্গে ফ্যালকো ডেটা সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও সামনে আনেন। তার মতে, প্রতিটি দেশের নাগরিকের তথ্য তাদের নিজস্ব দেশের সার্ভারে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপের তথ্য বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা সার্ভারে সংরক্ষিত হয়। ফলে ইরানি ব্যবহারকারীদের তথ্যও হয়তো দেশের বাইরে কোথাও রাখা হচ্ছে।

 

ইরানে এর আগেও বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে পুলিশ হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভের সময় গুগল প্লে ও হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদিও পরে এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

তবে বাস্তবতা হলো, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের সাধারণ মানুষ প্রোক্সি ও ভিপিএন ব্যবহার করে এসব অ্যাপে প্রবেশের উপায় খুঁজে নেয়।

ইরানের অভিযোগ যতটা রাজনৈতিক তা প্রযুক্তিগতও বটে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যোগাযোগমাধ্যমের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোনো অ্যাপকে নিষিদ্ধ করা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়েও বিতর্ক থাকছেই। হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মস এখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যস্ত, যেখানে নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন যোগাযোগ, সবই একসঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে।

ছামিয়া

×