
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের পাল্টা হামলার মুখে ইসরায়েলের বাঙ্কারগুলো আর সুরক্ষা দিতে পারছে না। ১৩ জুন রাত থেকে যখন তেলআবিব সরকার ইরানি ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালায়, তখন থেকেই ইরান যুদ্ধঘোষণামূলক প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে। এর ফলে পুরো ইসরায়েল কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা।
সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, ইসরায়েলজুড়ে প্রতিনিয়ত বাজছে সাইরেন। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ দলে দলে ছুটছে বাঙ্কারে। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত— বাঙ্কারেই কাটছে তাদের সময়। কেউ কেউ আর বাইরে না গিয়ে বাঙ্কারেই রাত পার করছেন।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তিশালী ওয়ারহেড বাঙ্কারের সুরক্ষাকে কার্যত অকার্যকর করে তুলেছে। ইসরায়েলি নাগরিকেরা আর নিচতলায়ও নিরাপদ নন। মোবাইল ফোনে ধারণ করা একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানি হামলার পর অনেক বাঙ্কার ধসে পড়েছে। কংক্রিটের ছাদ ও দেয়াল মানুষের ওপর ভেঙে পড়েছে। ভিতরের মানুষজন আতঙ্কিত, হতবিহ্বল অবস্থায় সাহায্যের জন্য চিৎকার করছেন।
এই বিপদের আগাম সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল ইরান। গত রোববার ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রেজা সাইয়্যাদ বলেন, ‘আসন্ন দিনগুলোতে আমাদের বার্তা—দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দিন। কারণ এগুলো ভবিষ্যতে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।’ তিনি ইসরায়েলিদের সতর্ক করে বলেন, ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রেও তারা নিরাপদ থাকবেন না। পাশাপাশি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল সরকার সাধারণ মানুষকে ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ১৩ জুন গভীর রাতে কোনো উসকানি ছাড়াই ইরানের ভেতরে, এমনকি আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। এসব হামলায় ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা নিহত হন, সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। বাসাবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জনপদের।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ওই রাতেই সেনাবাহিনীতে নতুন কমান্ডার নিয়োগ দেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য দিনগুলো অন্ধকার হয়ে আসছে।’ এরপরই ইরান তেলআবিব, জেরুজালেম, হাইফাসহ ইসরায়েলের অভ্যন্তরে পাল্টা হামলা শুরু করে।
ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যতদিন প্রয়োজন, এই ‘শাস্তিমূলক অভিযান’ চলবে। সেন্সরের কঠোর নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে—ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি নাগরিকদের মনে আশ্রয়কেন্দ্র (ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার) নিয়ে যে বিশ্বাস ছিল, তা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। যুদ্ধের মাত্রা ও পরিণতি নিয়ে গোটা অঞ্চলজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
সূত্র: ইরনা।
রাকিব