
ছবি: সংগৃহীত
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে আবাসিক এলাকায় ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI 171-এর ঘটনাটি অনেককেই ১৯৭৮ সালের আরেকটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে—বিমানের নাম ছিল 'এম্পেরর অশোকা'। প্রায় পাঁচ দশক আগের সেই দুর্ঘটনার মতো এবারও বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়েছে, প্রাণ গেছে শত শত মানুষের।
১৯৭৮ সালের ‘এম্পেরর অশোকা’ দুর্ঘটনার বিবরণ
নতুন বছরের প্রথম দিন, ১ জানুয়ারি ১৯৭৮। এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI 855—বিমানের নাম ‘এম্পেরর অশোকা’। এটি ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার প্রথম বোয়িং ৭৪৭ মডেলের বিমান, গন্তব্য ছিল দুবাই।
মুম্বাইয়ের সান্তা ক্রুজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বর্তমানে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বিমানবন্দর) থেকে সন্ধ্যা ৮টা ১২ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে।
বিমানটিতে ছিলেন ১৯০ জন যাত্রী ও ২৩ জন ক্রু সদস্য। উড্ডয়নের প্রায় এক মিনিটের মাথায় বিমানটি একটি হালকা ডান দিকে মোড় নেয়, কিন্তু তখনই ক্যাপ্টেনের ‘Attitude Director Indicator’ (ADI)—যা বিমানটি আকাশে কোন কৌণিকে রয়েছে তা বোঝায়—ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
ক্যাপ্টেন মদন লাল কুকর, যাঁর ১৮,০০০ ঘণ্টার বেশি উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল, তিনি বুঝতে পারেননি যে আসলে বিমানটি সোজা ছিল। ভুল ADI দেখাচ্ছিল যে বিমানটি এখনও ডানদিকে ঝুঁকে আছে। তিনি সে অনুযায়ী বামদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করেন, ফলে বিমানটি মারাত্মকভাবে বাম দিকে ১০৮ ডিগ্রি বাঁকে পড়ে এবং প্রায় ৩৫-৪০ ডিগ্রির কোণে নাক নিচু করে সাগরে পড়ে যায়।
এই দুর্ঘটনায় ২১৩ জনের সবাই মারা যান। ১৯৮২ সালের নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্তে বলা হয়: "ক্যাপ্টেন বিমানের বাস্তব অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল এবং তার যন্ত্রের বিভ্রান্তিতে অযৌক্তিক কন্ট্রোল ইনপুট দেয়ার ফলেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।"
আহমেদাবাদ দুর্ঘটনা: ৪৭ বছর পর একই দুঃস্বপ্ন
১২ জুন ২০২৫, দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান AI 171 আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন, যাদের মধ্যে ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় এলাকার আরও অনেকে নিহত ও আহত হয়েছেন, মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৭৪।
প্রাক্তন পাইলট ক্যাপ্টেন রাকেশ রাই NDTV-কে বলেন: “বিমানের ওঠার গতি এবং কোণ স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু ৪০০-৫০০ ফুট উচ্চতায় কোনো এক অজানা কারণে সমস্যা দেখা দেয়। বিমানটির গতি ও শক্তি ৬০০ ফুট পর্যন্ত উঠতে সাহায্য করলেও, সেখানেই সব শেষ।”
বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার বা আন্ডারকারেজ কখনও তোলা হয়নি।
ক্যাপ্টেন রাই ব্যাখ্যা করেন: “স্বাভাবিক নিয়মে উড্ডয়নের পর পজিটিভ রেট অফ ক্লাইম্ব দেখা গেলে কো-পাইলট বলেন, ‘পজিটিভ রেট’, এবং তখন মূল পাইলট বলেন ‘গিয়ার আপ’। কিন্তু এখানে গিয়ার তোলাই হয়নি। কেন হয়নি, তা জানতে হলে ডেটা ফ্লাইট রেকর্ডার বা ব্ল্যাক বক্স বিশ্লেষণ করতে হবে।”
মুমু ২