
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েল সরকার সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে এক সামরিক অভিযান চালিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, এই অভিযান চলবে “প্রয়োজন হলে যতদিন দরকার।” শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে শুরু হওয়া এই আক্রমণে ইরানের সামরিক ও সরকারি স্থাপনায় টার্গেট করে হামলা করা হয়, যাতে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর প্রধান হোসেইন সালামি ও ইরানের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীও।
ইসরায়েলের মতে, ইরান তাদের পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান কয়েক মাস বা এক বছরের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে।” এক অজ্ঞাত ইসরায়েলি সামরিক সূত্র জানায়, ইরান ইতিমধ্যে ১৫টি পরমাণু বোমা তৈরির মতো ফিশন উপাদান সংগ্রহ করে ফেলেছে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ এক ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড জানিয়েছেন, ইরান এখনো পরমাণু অস্ত্র তৈরির পথে হাঁটেনি এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামে্নী ২০০৩ সালে এ কর্মসূচি বন্ধ করে দেন।
এই আক্রমণ এমন এক সময়ে হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছিল। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই হামলা ইরানকে আলোচনায় চাপে ফেলতে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশল হতে পারে।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানায়, ইরান পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির (NPT) কিছু শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তবে সংস্থাটি কোথাও বলেনি যে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করেছে।
নেতানিয়াহু বরাবরই ইরানকে “অক্টোপাসের মাথা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যার শাখা ছড়ানো রয়েছে হুতি, হিজবুল্লাহ, ও হামাস পর্যন্ত। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া যুদ্ধের মাধ্যমে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ভেঙে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল এখন সুযোগ দেখছে ইরানকেও সামরিকভাবে দুর্বল করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সামরিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার।
অনেক বিশ্লেষকের দাবি, এই সামরিক অভিযান রাজনৈতিকভাবে চাপে থাকা নেতানিয়াহুর জন্য ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার একটি কৌশল। গাজায় ৫৫,০০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে—এবং এর দায় নেতানিয়াহুর ওপরেই বর্তায় বলে দাবি বিরোধীদের। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা এবং সাম্প্রতিক সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব থেকেও তিনি রক্ষা পেয়েছেন অল্পের জন্য। এ অবস্থায়, ইরান আক্রমণ নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বিশ্লেষক অধ্যাপক মাইকেল বেকার বলেন, ইসরায়েলের এই হামলা জাতিসংঘ সনদের আত্মরক্ষার অধিকার সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘন করতে পারে। তিনি বলেন, “আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণ তখনই বৈধ হয়, যখন তা চলমান বা আসন্ন হামলার জবাবে হয়। ইরান থেকে এমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।”
মুমু ২