
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় স্কুল, মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে আশ্রয় নেওয়া সাধারণ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে ‘গণহত্যা’র মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ইসরায়েল—জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন এক বিস্ফোরক রিপোর্টে এমনই অভিযোগ এনেছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে চালানো হামলায় বেসামরিক প্রাণহানির ঘটনাকে ‘ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে কমিশন।
জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক মানবাধিকার হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই বলেছেন, “আমরা ক্রমেই আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, গাজায় ফিলিস্তিনি জীবন সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার একটি সংগঠিত অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল।”
৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে
রিপোর্ট অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৯০ শতাংশেরও বেশি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় ভবন আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে অঞ্চলটির অর্ধেকের বেশি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
“শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোর ধ্বংস নিজে থেকে হয়তো গণহত্যা নয়, কিন্তু এর পেছনে যে উদ্দেশ্য রয়েছে, তা গণহত্যার ইঙ্গিত বহন করে,” রিপোর্টে বলা হয়।
কমিশনের বক্তব্যে আরও বলা হয়, “ফিলিস্তিনি জনগণের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় জীবনে এই নির্দয় আঘাত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
শুধু গাজা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম তীরও
কমিশনের রিপোর্টে শুধু গাজার কথা নয়, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের কথাও উঠে এসেছে। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইসরায়েলি সেনা হস্তক্ষেপ, ছাত্রদের হয়রানি এবং বসতি স্থাপনকারীদের হামলার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
নাভি পিল্লাই বলেন, “গাজার শিশুরা তাদের শৈশব হারিয়েছে। শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। তারা এখন কেবল বাঁচার লড়াইয়ে ব্যস্ত—বোমা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ও অমানবিক পরিবেশে।”
তিনি আরও বলেন, “সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই হামলা শুধু গাজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা পুরো ফিলিস্তিনি শিশুদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে।”
১৭ জুন জাতিসংঘে উত্থাপন
এই রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উপস্থাপন করা হবে ১৭ জুন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েল এই পরিষদ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়, দাবি করে যে পরিষদটি ‘পক্ষপাতদুষ্ট’।
এর আগের রিপোর্টে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ধ্বংসের মাধ্যমে ‘গণহত্যামূলক কার্যকলাপ’ চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছিল। ওই রিপোর্টের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সন্ত্রাস-সমর্থক’ বলে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই রিপোর্ট বিশ্বজনমত ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের ওপর নতুন চাপ তৈরি করবে।
সূত্র: আল জাজিরা।
রাকিব