ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানের বিজ্ঞানী হত্যার নেপথ্যে পম্পেওর সফর!

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ৩০ নভেম্বর ২০২০

ইরানের বিজ্ঞানী হত্যার নেপথ্যে পম্পেওর সফর!

অনলাইন ডেস্ক ॥ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সাম্প্রতিক তেলআবিব সফরের সঙ্গে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক আমোস ইয়াদলিন। ইয়াদলিন দুই সপ্তাহ আগে মাইক পম্পেওর ইসরাইল সফরকে ‘অর্থবোধক’ আখ্যায়িত করে বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিছক বিনোদনের জন্য তেলআবিব সফরে আসেননি। খবর বিবিসি ও জেরুজালেম পোস্টের। ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ গত শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানের অদূরে দামাভান্দ কাউন্টির অবসার্দ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। ইয়দালিন রোববার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ইহুদিবাদীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছে। ইসরায়েলি ও পশ্চিমা অনেক মিডিয়ায় সম্প্রতি সৌদি আরবের নিওম শহরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে এক গোপন বৈঠকের খবর প্রচারিত হয়। এতে বলা হয়, ইরান নিয়ে তাদের দুই দেশের উদ্বেগ নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। বিভিন্ন রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, নিওমে ওই বৈঠকে ইসরাইলের সঙ্গে এখনই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে নেতানিয়াহু যুবরাজ মোহাম্মদকে রাজি করাতে পারেননি। অবশ্য সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন কোনো বৈঠক হওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। যুবরাজ মোহাম্মদ এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বৈঠকের পর দিনই সোমবার যখন ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা জেদ্দায় একটি তেল স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের কট্টরপন্থী মিডিয়ায় ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হয়, হুতিরা কুদস-২ (ইরানে তৈরি) দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের সরকার সমর্থক সংবাদ সংস্থা মেহের লিখেছে– ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। সৌদি-ইসরাইল বৈঠকের পর ওই দুই দেশকে একটি সতর্কবার্তা দেয়া হলো যে, ইরানের বিরুদ্ধে যেন কিছু করার আগে তারা যেন দশবার ভাবে। শুক্রবার সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইরানের অধিকাংশ মানুষের কোনো ধারণাই ছিল না মোহসেন ফখরিজাদেহ কে। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর যারা নজর রাখেন, তারা তাকে ভালোই চেনেন। ইসরাইল ও পশ্চিমা গোয়েন্দারা মনে করেন, ফখরিজাদেহ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান স্তম্ভ। তবে ইরানের সংবাদমাধ্যম তাকে বর্ণনা করছে, একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যিনি সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরানে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে একটি টেস্ট কিট বানানোর গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ইরানের পারমানবিক কর্মসূচির ওপর গভীর নজর রাখছে লন্ডনে গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মার্ক ফিটজপ্র্যাট্রিক। তার মতে, ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি এখন এমন অবস্থায় চলে গেছে যেখানে তা আর একজন মাত্র ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়। ইরানী বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের পেছনে সম্ভাব্য দুটো মোটিভ বা উদ্দেশ্য কাজ করেছে বলে এখন পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে: প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন সরকারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নষ্ট করা। দ্বিতীয়ত: ইরানকে বদলা নিতে উস্কানি দেয়া। মোহসেন ফখরিযাদেহর হত্যাকাণ্ডের পর তার প্রথম বক্তব্যে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মন্তব্য করেন, শত্রুরা গত কয় সপ্তাহ ধরে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। তারা বুঝতে পারছে, বিশ্বের পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে, এবং হাতের বাকি সময়টায় তারা এই অঞ্চলে একটি অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে এক লাইভ টিভি অনুষ্ঠানে ইজরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইরানের পারমানবিক কর্মসূচিতে ফখরিযাদেহর ভূমিকা উল্লেখ করে বলেছিলেন, মোহসেন ফকরিযাদে নামটি মনে রাখুন।
×