ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকান পর্যটকের দৃষ্টিতে ইরানি কার্পেট

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

আমেরিকান পর্যটকের দৃষ্টিতে ইরানি কার্পেট

অনলাইন ডেস্ক ॥ একজন আমেরিকান পর্যটক কিছুদিন আগে ইরান সফর করেন। তিনি দু'সপ্তাহ ধরে ইরানের বিভিন্ন শহর ঘুরে দেখেন। আর এ সফরে তিনি ঐতিহাসিক ইস্পাহান নগরীর বিভিন্ন কার্পেটের দোকানে যান। ইরানি কার্পেট সম্পর্কে মার্কিন এই পর্যটকের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে এই ভিডিও ক্লিপে। ভিডিওটির ইংরেজি ভাষার বর্ণনা ও কথোপকথোনের বাংলা ভাষান্তর উপস্থাপন করা হলো: দোকানদার: সালাম বন্ধুরা, আমার কার্পেটের দোকানে স্বাগতম। পর্যটক: ইরান মানেই কার্পেটের দেশ। ইরানে কার্পেট-বোনার শিল্প ২৫০০ বছরের পুরনো। আর বর্তমানে ইরান বিশ্বের বৃহত্তম কার্পেট উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ। আর এ খাতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করছে ইরান। আমার মনে হয় এটা বললে অত্যুক্তি করা হবে না যে, বিশ্বে ইরানিদের মত ভালো করে আর কেউ কার্পেট বোনে না। দোকানদার: এই কার্পেটটি একশ’ বছরের পুরনো। এটা একটা অমূল্য সম্পদ। এটাতে নামাজও পড়া যায়। উট এবং ভেড়ার পশম দিয়ে এটি তৈরি হয়েছে। পর্যটক: বহু শতাব্দী ধরে ঘরের মেঝের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ইরানে কার্পেট ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এমনকি গ্রাম এলাকায় ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্যও এ কার্পেট ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যুদ্ধ, আগ্রাসন কিংবা শান্তি সব ধরনের পরিস্থিতিতে বংশ পরম্পরায় কার্পেট বোনার টেকনিক ও পদ্ধতিগুলো বর্তমান প্রজন্মের হাতে এসে পৌঁছেছে। দোকানদার: দেখুন! এখানে কত নরম আর এখানে সুতার বুনন দেখুন। আমরা সামনে ও পিছন থেকে একটি করে সুতা নিয়ে গেরো দিয়ে থাকি। পর্যটক: ইরানের কার্পেটে বৈচিত্র্য চোখে পড়ার মতো। কারণ ইরানে ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী আলাদা আলাদা ধরনের কার্পেট বোনার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। দোকানদার: আমাদের দেশে কেশকায়ি, লোর, বালুচ, কোর্দ, আরব, শাহসাওয়ান, তুরকামান ও সারাক্সসহ বিভিন্ন জাতি বসবাস করে। তারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কার্পেট বুনন করে থাকে। পর্যটক: বর্তমানে সমগ্র ইরানে কার্পেট বুনন সবচেয়ে পছন্দনীয় হস্তশিল্প হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আর আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই কার্পেট দেখতে পাবেন। ফ্লোর, বিভিন্ন প্রাসাদের দেওয়াল, ঘর, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, জাদুঘর ও প্রসিদ্ধ ভবনসহ সবখানে। আজ আমরা ইস্পাহানে রয়েছি। এখানে ষোড়শ শতাব্দী থেকে ইরানি কার্পেট বোনা হয়। বিভিন্ন ধরনের অপূর্ব রঙের ব্যবহার ও সুনির্দিষ্ট নকশা অনুসরণ করে উচ্চমানের শৈল্পিক গুণে এই কার্পেট নির্মাণ করা হয় বলে তা প্রসিদ্ধি পেয়েছে। আমরা এখানে "ইরান পাজিরিক" নামের একটি প্রসিদ্ধ কার্পেটের দোকানে যাই। মাজিদ নামের একজন কার্পেট শিল্পীর কাছ থেকে আমরা কয়েকটি শ্রেষ্ঠ ইরানি গালিচা সম্পর্কে জানতে চাই। শুধু মাজিদ নয় বরং বহু ইরানির কাছে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, তাদের জন্য কার্পেট অনেক মূল্যবান আয়ের উৎস। আর আমরা যখন বলি অনেক দামী... তখন এই গালিচাগুলো কিন্তু মোটেই সস্তা নয়। দোকানদার: ২৭ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার এর দাম; যার মধ্যে পরিবহন খরচও রয়েছে। আর এটার মূল্য ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এটা রেশম সুতা দিয়ে বোনা হয়েছে। এটাতে উল, ১৮ ক্যারেটের ২৫০টি স্বর্ণখণ্ড ও মুক্তা ব্যবহৃত হয়েছে। এ সব মুক্তার সবগুলো সম্প্রতি পারস্য উপসাগর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা স্বর্ণ, ১৮ ক্যারেটের, ২৫০টি। দোকানদার: ৭০ হাজার ডলার। পর্যটক: আমি কি জানতে পারি, আপনাদের এখানে সবচেয়ে সস্তা কার্পেটের দাম কত? দোকানদার: ৭০ মার্কিন ডলার। পর্যটক: আমি একটা কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার বাজেটের তুলনায় এ কার্পেটের দাম অনেক বেশি। বিশেষ করে যে কার্পেটগুলো খাঁটি রেশম, উল ও এন্টিকের সে কার্পেটগুলো আমার খুবই পছন্দ। দোকানদার: এটা ১০০% খাটি রেশমের তৈরি। পর্যটক: দাম কত? দোকানদার: এক লাখ মার্কিন ডলার। পর্যটকের সহযোগী: আমিন, (দাম শুনে) তোমার কি মনে হচ্ছে? পর্যটক: (আমার মনে হচ্ছে) আমি এই গালিচার দামে একটি সুন্দর ফ্ল্যাট কিনতে পারব। কোনোদিন যদি আবার ইরানে আসার সুযোগ হয় তখন হয়তো এ ধরনের একটি কার্পেট কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
×