ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানীদের প্রতিবেদন

বড় ধরনের পরমাণু বোমা হামলার জন্য প্রস্তুত নয় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩১ আগস্ট ২০১৮

বড় ধরনের পরমাণু বোমা হামলার জন্য প্রস্তুত নয় যুক্তরাষ্ট্র

বড় ধরনের পরমাণু হামলার জন্য এখনও প্রস্তুত নয় যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়া বা পরমাণু অস্ত্রে শক্তিশালী অন্য কোন দেশ আচমকা হাইড্রোজেন বা পরমাণু বোমা ফেললে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় অংশ। মৃত্যু হতে পারে লাখ লাখ মানুষের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে ওয়াশিংটন, ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া, মেরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও আলেকজান্দ্রিয়ার লাখ লাখ মানুষ। আনন্দবাজার পত্রিকা। বড় ধরনের পরমাণু হামলা ঠেকানো তো দূর অস্তই, বিস্ফোরণের পর পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্সও যথেষ্টই অপ্রতুল মার্কিন মুলুকে। আমেরিকার ন্যাশনাল এ্যাকাডেমিজ অব সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড মেডিসিন ও মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিওরিটি (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) দফতরের এক বিশেষ বৈঠকে ওয়াশিংটনে গত সপ্তাহে এই রিপোর্ট দিয়েছেন মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে কী কী করণীয়, তা জানিয়ে আগামী ডিসেম্বরে তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে সব রিপোর্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন। ‘নিউজ এ্যান্ড টেররিজম’ শীর্ষক সেই ফ্যাক্ট শিটে (রিপোর্ট) বলা হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বড় ধরনের পরমাণু হামলা ঠেকানোর আর কোন প্রস্তুতি নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তার জন্য মার্কিন বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা তো দূরের কথা, তা ৫০ শতাংশেরও বেশি কাটছাঁট করা হয়েছে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের আয়োজনে ওই বৈঠকে আমন্ত্রিত বক্তা জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী অমর্ত্য চট্টোপাধ্যায় ও অরুণ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘আমেরিকার নজর এখন সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবেলায়। যারা বড়জোর ১ কিলো টন (১ হাজার টন) ওজনের পরমাণু বোমা বানাতে পারে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের হাতে যে ধরনের পরমাণু বোমা বানানোর প্রযুক্তি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকটির ওজন খুব কম হলে, হতে পারে ১৮০ কিলো টন। সেগুলো ফেলা হলে, তার জেরে যে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, তা সামলানোর মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই।’ বৈঠকে প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ টেনের ভিনিমা ও আথেন্সের জর্জিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী কাম ডালাস। অমর্ত্য জানাচ্ছেন, যে ধরনের পরমাণু বোমার হামলা ঠেকানোর ব্যবস্থা রয়েছে এখন মার্কিন মুলুকে, তা ওজনে খুবই হাল্কা। ওই বোমাগুলোকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় পরমাণু বোমা বলাও যায় না। আদতে এদের নাম- ‘ডার্টি বম্ব’ বা, ‘রেডিওলজিক্যাল ডিজপার্সাল ডিভাইস’ (আরডিডি)। এগুলো আকাশ থেকে কয়েকটি প্রচলিত (কনভেনশনাল) তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে দিতে পারে। তার বেশি ক্ষমতা নেই ওই ডার্টি বম্বের। অরুণ শ্রীবাস্তবের ভাষায়, ‘উত্তর কোরিয়ার মতো পরমাণু অস্ত্রে শক্তিশালী দেশগুলোর হাতে যে বোমা রয়েছে সেগুলো হাইড্রোজেন বা খুব শক্তিশালী পরমাণু বোমা। তা পড়লে ক্ষয়ক্ষতি হবে অনেক পরিমাণে। আর তার ক্ষত থেকে যাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। সেই ক্ষয়ক্ষতি সামলানোর মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই যুক্তরাষ্ট্রের।’ শক্তিশালী পরমাণু বোমা পড়লে প্রথমত, আকাশেই তৈরি হয় অগ্নিগোলক (ফায়ারবল)। যার তাপমাত্রা পৌঁছায় কয়েক লাখ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। দ্বিতীয়ত, বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠে হয় তীব্র আলোড়ন (শক ওয়েভস)। তৈরি হয় এক ধরনের মেঘ। মাশরুম ক্লাউড। অগ্নিগোলকের ভেতরে থাকা পদার্থ বাষ্পীভূত হলেই জন্মায় ওই মেঘ। মেঘ ক্রমশ ওপরে উঠতে থাকে। পরে নিউক্লিয়ার ডিভাইস থেকে সেই মেঘে ঢুকে পড়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ। সেই বাষ্পীভূত তেজস্ক্রিয় পদার্থ ঠা-া হলে কঠিন হয়। আর মাটিতে নামতে শুরু করে। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। হাওয়ার জোরে তা মাটিতে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তৃতীয়ত, বাতাসে আধানযুক্ত কণার (চার্জড পার্টিকবা আয়ন) প্রাচুর্যে মাটির গভীর পর্যন্ত শক্তিশালী বিদ্যুত (ইলেক্ট্রিক কারেন্ট) প্রবাহ হয়। ফলে, তড়িদাহত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। আর ‘ডার্টি বম্ব’ পড়লে এক, যে এলাকার ওপর ডার্টি বম্ব পড়ে, সেখানে ছড়িয়ে পড়ে প্রচুর পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ।
×