ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন হুঁশিয়ারি উপেক্ষা

এস-৪০০ মিসাইল কিনছে ভারত

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২ জুলাই ২০১৮

এস-৪০০ মিসাইল কিনছে ভারত

ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত এটি করছে। বিষয়টি নিয়ে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সম্প্রতি অনেক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে চুক্তি সই না হলেও বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করা হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া। ভারতের ডিফেন্স এ্যাকুইজেশন কাউন্সিল (ডিএসি) বৃহস্পতিবার সামান্য কিছু রদবদলসহ রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনার চুক্তি অনুমোদন করেছে। সিস্টেমটি কিনতে ভারতের ৩৯ হাজার কোটি ডলার খরচ হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারামনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডিএসির এক সভায় চুক্তিটি অনুমোদিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে রাশিয়ার কাছ থেকে মিসাইল সিস্টেম কিনলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। সূত্র জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর বিষয়টি এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা কমিটিতে। আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পর রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের আগে দেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের ডেকে নিয়ে এ সম্পর্কে অবহিত করানো হবে। ৬ জুলাই ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারামনের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বুধবার ‘টু প্লাস টু’ নামের বৈঠকটি বাতিল করে। এর একদিন পর ডিএসি বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনার চুক্তি অনুমোদন করে। টাইমস অব ইন্ডিয়া ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথম খবর দিয়েছিল যে ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনার পরিকল্পনা করেছে। এটি ৪শ’ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত শত্রুপক্ষের যে কোন বোমারু বিমান, স্টেলথ ফাইটার, গুপ্তচর বিমান, মিসাইল ও ড্রোন শনাক্ত করা থেকে ধ্বংস করতে পারবে। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে পারে এই সিস্টেম। ২০১৬ সালের অক্টোবরে গোয়ায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচটি এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম কেনা নিয়ে কথা শুরু হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে মিসাইল সিস্টেম না কিনতে বলে। কোন দেশ যেন রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি না কেনে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র সিএএটিএসএ( কাউন্টারিং আমেরিকাস এ্যাডভার্সারিজ থ্রো স্যাঙ্কশনস এ্যাক্ট) নামে একটি আইনও প্রণয়ন করেছে। এই আইন পাশ কাটানোর উপায় নিয়েও ভারত ও রাশিয়া নিজেদের পরিকল্পনা ঠিক করেছে। এর আগে টাইমস অব ইন্ডিয়া খবর দিয়েছিল রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি কেনার পরিকল্পনা করেছিল কিস্তু সেটি চূড়ান্ত হয়নি। এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম চুক্তির আওতায় ভারতের সেনাবাহিনী প্রথম এস-৪০০ স্কোয়াড্রন পাবে। এছাড়া কমান্ড পোস্ট ও লঞ্চারের ব্যাটল ম্যাানেজমেন্ট সিস্টেম, এ্যাকুইজিশন ও এনগেজমেন্ট রাডার, অলটেরেইন ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টার লঞ্চার ভেহিক্যাল পাবে। এদিকে ভারতের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অগ্নি পঞ্চম-এর প্রথম ব্যাচের সেনা কমান্ডে অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে শীঘ্রই। অগ্নি পঞ্চম চীনের রাজধানী বেজিংকে আঘাত করতে সক্ষম এবং প্রত্যাশা, এ ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে দেশের সামরিক শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। ৫ হাজার কিলোমিটার পাল্লার এবং পরমাণু ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আধুনিক স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডে (এসএফসি) অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সরকারী সূত্রে এ কথা বলা হয়েছে। তারা বলেছে, দেশের সবচেয়ে আধুনিক এ অস্ত্র এসএফসিয়ের কাছে হস্তান্তরের আগে বেশ কয়েকটি ব্যবহারকারী পরীক্ষা চালানো হবে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রটি বেজিং, সাংহাই, গুয়াংঝৌউ ও হংকংসহ চীনের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে পৌঁছবার সামর্থ্য থাকছে। অগ্নি-পঞ্চম-এর সফল পরীক্ষা চালানো হয় গতমাসে উড়িষ্যার উপকূলে এবং সূত্র বলেছে, সূচনাপূর্ব আরও কয়েকটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে। কর্মকর্তা বলেন, এটি ভারতের এক কৌশলগত সম্পদ। এটি পরমাণু অস্ত্র বহনে কাজ করবে। এ কর্মকর্তা অগ্নি-পঞ্চম কর্মসূচীর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, এ ক্ষেপণাস্ত্র দেশের নেভিগেশনে সাম্প্রতিক প্রযুক্তিতে সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্র হিসেবে শ্রেষ্ঠ এবং এর পরমাণু ওয়ারহেড বহনের সক্ষমতা অত্যন্ত উৎকর্ষ।
×