তামিলনাড়ুর শীর্ষ রাজনীতিক ভিকে শশীকলার পরিবারের সদস্য ও তাদের পরিচালিত জয়া টেলিভিশনের নামে এক হাজার ৪শ’ ৩০ কোটি রুপী অঘোষিত আয়ের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ভারতের আয়কর কর্মকর্তারা। যাদের নামে এই বিপুল পরিমাণ অপ্রকাশিত আয়ের তথ্য মিলেছে বলে অভিযোগ, তাদের মধ্যে শশীকলার ভাই ভিকে দিবাকরণও আছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ দিন ধরে চালানো অভিযানে আয়কর কর্মকর্তারা নগদ সাত কোটি রুপী, পাঁচ কোটি রুপী মূল্যের সোনা ও হীরা-জহরতের একটি বড় সংগ্রহ উদ্ধারের কথাও জানিয়েছেন। উদ্ধার হীরার মূল্য জানতে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তারা। হিসাবের বাইরে থাকা আয়ের পরিমাণ অবশ্যই এক হাজার ৪শ’ ৩০ কোটি রুপীর থেকেও বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থানে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ জড়ো করে রাখা হয়েছে, এটা তার প্রমাণ, অভিযান শেষে বলেন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। শশীকলার পরিবারের সদস্যদের পরিচালিত বেশ কয়েকটি শেল কোম্পানিরও সন্ধান পেয়েছেন আয়কর কর্মকর্তারা। মিলেছে অসংখ্য সন্দেহজনক নথি। এনডিটিভি জানায়, শশীকলার পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠদের লক্ষ্য করেই পাঁচ দিনের এ অভিযান চালিয়েছিল আয়কর বিভাগ। গত বছর প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শশীকলা অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাঘাম (এআইএডিএমকে) দলের সাধারণ স¤পাদক। দুর্নীতি, মুদ্রা পাচার ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের অভিযোগে চলতি বছরের শুরুতে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়। অভিযান শুরুর প্রথম দিনই কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছিলেন, এআইএডিএমকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জয়া টিভি গোষ্ঠী বেশ কয়েকটি শেল কোম্পানি ও জাল হিসাব চালায়। কর কর্মকর্তাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এআইডিএমকে নেতা টিটিভি ধিনাকরণ বলেছেন, এ অভিযান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দুই হাজার মানুষ দিয়ে পরিচালিত এ বৃহৎ অভিযানের কি প্রয়োজন ছিল? স্পষ্টতই যারা এআইডিএমকে সরকারকে বাঁচাতে চাইছে তাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে, বলেন তিনি। আয়কর বিভাগ অভিযানের সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারতজুড়ে ক্লিন মানি ড্রাইভ অপারেশনের অংশ হিসেবেই এ অভিযান বলেও জানিয়েছেন তারা। কর্মকর্তারা জানান, তারা তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, পুদুচেরি ও দিল্লীর ১৮৭টি স্থানে থাকা ১০টি গোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের সম্পদে কর ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটনে অভিযান চালান। জয়া টিভি পরিচালনা করে যে পরিবার তাদের সদস্যরাই প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল। যদিও আমাদের বিশ্বাস, অন্য নয়টি গোষ্ঠীও এদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়িত। এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে, বলেন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। জয়া টিভি দীর্ঘদিন ধরে এআইএডিএমকের মুখপাত্রের ভূমিকায় থাকলেও দলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মেলানোয় কয়েক মাস ধরেই তারা ই পালানিস্বামী সরকারের কট্টর সমালোচনা করে আসছে। টেলিভিশনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পালানিস্বামী সরকার একটি রেজ্যুলেশন নিয়েছে বলেও এনডিটিভি জানিয়েছে। জয়ললিতার মৃত্যুর পর এআইএডিএমকে দলের মধ্যে শুরু হওয়া অস্থিরতা এখনও শেষ হয়নি। বিধানসভার স্পীকার সম্প্রতি শশীকলার সমর্থক হিসেবে পরিচিত ১৮ সাংসদকে হুইপের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর অভিযোগে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। আদালত স্পীকারের এ আদেশ বাতিল ঘোষণা করলে ওই সাংসদরা ই পালানিস্বামী সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিতে পারে, এমন ধারণাও করছেন কেউ কেউ।