ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম আটদিনের বিদেশ সফরে ট্রাম্প

সৌদিতে উষ্ণ সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২১ মে ২০১৭

সৌদিতে উষ্ণ সংবর্ধনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার সৌদি আরব পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে দয়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম বিদেশ সফর শুরু করলেন। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা তার এ সফরের অন্যতম লক্ষ্য। তিনি এমন এক সময় এ সফর করছেন যখন দেশে তিনি নানাবিধ রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে গেছেন। খবর এএফপির। আটদিনের সফরের শুরুতে ট্রাম্প সৌদি আরবে গিয়ে পৌঁছালে সেখানে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা দেয়া হয়। সৌদি বাদশাহ সালমানসহ রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাত করেন। ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানটি শনিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রিয়াদের কিং খালেদ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে স্পর্শ করে। ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার সম্মানে এয়ারপোর্টের টারমাকে লাল কার্পেট বিছিয়ে দেয়া হয়। মেলানিয়া রক্ষণশীলতার প্রতীক কালো পোশাক পরলেও তিনি মাথা আবৃত করেননি। তারা উভয়ই বাদশাহ সালমানের সঙ্গে করমর্দন করেন। মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্প সম্প্রতি তীব্র রাজনৈতিক সঙ্কটের চাপে রয়েছেন। সৌদিতে তার এই সফর তাকে সাময়িকভাবে হলেও এ থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি দিয়েছে। শনিবার আরও পরের দিকে ট্রাম্প রাজপরিবারের দুই প্রভাবশালী প্রিন্সের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। রবিবার মুসলিম দেশগুলোর উদ্দেশে তার বক্তৃতা দেয়ার কথা রয়েছে। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের আরবদেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র। ট্রাম্পের এই সফরকে রিয়াদ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। পূর্বসূরি বারাক ওবামার সময় দু’দেশের সম্পর্কে যথেষ্ট টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। কারণ ওবামা সুন্নি আরব দেশগুলোকে পাশ কাটিয়ে শিয়া শাসিত ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সালমান আশা করছেন ট্রাম্প সম্ভবত তার পূর্বসূরির নীতি থেকে সরে আসবেন। যুক্তরাষ্ট্রে গত নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই সৌদি নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। ট্রাম্পের এ সফরে বিশাল অঙ্কের অস্ত্র বিক্রি চুক্তি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের রবিবারের বক্তৃতাকে অনেকেই ওবামার ২০০৯ সালের জুনে কায়রোতে দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণের সঙ্গে তুলনা করছেন। তিনি কি বক্তব্য দিবেন যদিও সেটি জানা যায়নি। নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকে ট্রাম্প মুসলিমবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে এসেছেন। ক্ষমতায় আসার পর তিনি ছয়টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে অভিবাসী আগমন নিষিদ্ধ করেন। এসব কারণে মুসলিম দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। রবিবারের বক্তৃতাকে তাই কলঙ্ক মোচনের একটি চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য এ বক্তৃতা ওবামার মতো সহজ হবে না। ওবামা পূর্বসূরির ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট আমেরিকার ভাবমূর্তি মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু ট্রাম্পকে তার নিজেরই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত সমর্থন করে মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে এটি দ্বিমুখী পদক্ষেপ। সফর শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রতি আমি ঘৃণা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার আহ্বান জানাব। তাদের আমি অনুরোধ করব তারা যেন নিজেদের একটি শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যত গড়ার দিকে মনোযোগ দেয়।’ ট্রাম্প চান উপসাগরীয় দেশগুলো আরও বেশি করে ইসলামিক স্টেটসহ অন্যান্য জিহাদী গ্রুপগুলোর প্রতি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সৌদি আরব সফর শেষে ট্রাম্প ইসরাইল ও ফিলিস্তিনী ভূখ- সফর করবেন। তিনি সেখানে থেমে যাওয়া শান্তি প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ‘এই সফরে আমেরিকার স্বার্থকে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দেয়া হবে’, আরব ও ইউরোপের দেশগুলোতে আটদিনের ম্যারাথন সফর শুরুর আগে টুইটারে একথা লেখেন ট্রাম্প। ইউরোপে পোপ ফ্রান্সিস ছাড়াও ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রাঁর সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে। রিয়েল এস্টেট মুঘল খ্যাত ট্রাম্প সাধারণত এত দীর্ঘ সফর করেন না। রাশিয়ার সঙ্গে মাখামাখি নিয়ে ট্রাম্প দেশে এতটাই বেকায়দায় রয়েছেন যে অনেকে এরই মধ্যে তার প্রেসিডেন্সিকে রিচার্ড নিক্সনের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা শুরু করেছেন।
×