ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিমিয়া দখলের সাক্ষী ভোরোনেনকভ হত্যা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ॥ পোরোশেনকো

দেশ ছেড়েও বাঁচতে পারলেন না পুতিনের সমালোচক

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৫ মার্চ ২০১৭

দেশ ছেড়েও বাঁচতে পারলেন  না পুতিনের সমালোচক

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সাবেক রুশ আইন পরিষদ সদস্য ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক ডেনিস ভোরোনেনকভ বৃহস্পতিবার আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। যে মৃত্যুর ভয়ে তিনি গত বছর রাশিয়া ছেড়ে ইউক্রেনে আশ্রয় নিয়েছিলেন সে মৃত্যুই তাকে কোলে টেনে নিল। কিয়েভে এক হোটেলের বাইরে প্রকাশ্য দিবালোকে আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। তার দেহরক্ষীদের পাল্টা গুলিতে আততায়ী হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেনকো, নিহত ভোরোনেনকভকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন এবং ক্রিমিয়া দখল করে নেয়ার অন্যতম প্রধান সাক্ষী হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, তাকে হত্যার মাধ্যমে রাশিয়া রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল। পোরোশেনকোর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মস্কো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। সরকার পরিচালিত বার্তা সংস্থা তাস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ, ভোরোনেনকভের মৃত্যুর সঙ্গে রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার বিষয় ‘অসম্ভব’ বলে উড়িয়ে দেন। কিন্তু মৃত্যুর মিছিলে পুতিনের সমালোচকদের লাশের সংখ্যা যত দীর্ঘ হচ্ছে জনমনে সন্দেহের তীর বা অঙ্গুলি নির্দেশ করছে পুতিনের দিকেই। কেননা, প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পুতিন ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা কেজি’বির প্রধান। বর্তমানে যার নাম হয়েছে এফএসবি। বলা হয়ে থাকে, কত নিপুনভাবে মানুষ খুন করা যায় তা এই সংস্থা ভাল করেই জানে। রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনৈতিক হত্যাকা- প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় তার অন্যতম কুশীলব ছিলেন রুশ এক নায়ক জোশেফস্ট্যালিন। তার সমালোচক লিও স্ট্রটস্কি মেক্সিকো গিয়েও বাঁচতে পারেননি মৃত্যুর হাত থেকে। ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট গুপ্তঘাতকের কুড়ালের আঘাতে তাকে প্রাণ দিতে হয়। রুশ এজেন্টদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বা সমালোচকদের হত্যা তালিকা বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে ভিন্ন মতাবলম্বী সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এমন কী নিজ সংস্থার সাবেক গোয়েন্দা সদস্যরাও রেহাই পায়নি। ২০০৬ সালে রুশ গুপ্তচর ‘আলেকজান্ডার’ লিটভিনেনকো লন্ডনে বিষক্রিয়ায় মারা যান। মৃত্যুর সময় দেয়া জবানবন্দীতে তিনি তাকে বিষ প্রয়োগের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সরাসরি দায়ী করেন। একই সালে চেচনিয়া যুদ্ধে রুশ আগ্রাসনের জন্য সমালোচনা করার অপরাধে এ্যানা পলিটকোভ্স্কায়া নামে এক নারী সাংবাদিককে মস্কোতে তার এ্যাপার্টমেন্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। চেচনিয়ায় রুশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এ নিয়ে তথ্যানুসন্ধানী নাতালিয়া এস্তেমিরোভা নামে এক নারী মানবাধিকার কর্মীকে ২০০৯ সালে প্রথম অপহরণ, পরে অন্যত্র গুলি করে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে রাশিয়া সমর্থিত চেচনিয়ার পুতুল সরকার প্রধান রমজান কাদিরভকে দায়ী করা হলে তিনি তা বেমালুম অস্বীকার করেন। ২০১৩ সালে রুশ সরকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে মস্কো থেকে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাচনে যান সে দেশের বিখ্যাত ব্যবসায়ী বোরিস বেরে জোভস্কি। তাকে তার নিজ বাসায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালে তদানীন্তন রুশ প্রেসিডেন্ট বোরিস ইয়েলেৎসিকের উপ-প্রধানমন্ত্রী বোরিন্স নেমটসবের ক্ষেত্রে। তিনি নির্বাচনে কারচুপি করার জন্য পুতিনের সমালোচনা করেন। তাকে মস্কোর কেন্দ্রস্থলে পিছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বোরিন্স নেমটসরের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তারা সবাই বেকসুর খালাস পায়। নেমটসরের মৃত্যুর জন্য পুতিন চরমপন্থী ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলাকারীদের দায়ী করেন। এরপরই বোরিসের বন্ধু ভøাদিমির কারামুরজাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। কারামুরজা অবাধ নির্বাচন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। সমালোচকদের অভিযোগ, বিরুদ্ধমত দমনের লক্ষ্যে রাশিয়া এখন স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার কৌশল অবলম্বন করছে। এক্ষেত্রে নব্য লৌহমানব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ভøাদিমির পুতিন। রাশিয়ার অভ্যন্তরে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা বিস্তারিত জানা না গেলেও এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পুতিনের সমালোচকরা ভিন্ন দেশে গিয়েও নিস্তার পাবেন না। Ñসিএনএন
×